শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশেষ বন্ড ছাড়তে যাচ্ছে চীন। স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতি চাঙা করার লক্ষ্য নিয়ে এই বন্ড ছাড়া হবে। যার মাধ্যমে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি ইউয়ান বাজার থেকে তোলা হবে। আগামী তিন মাস ধরে এই অর্থ আবাসান ব্যবসা, স্থানীয় পুঁজি সরবরাহ ও ব্যাংকব্যবস্থাকে জোরদার করতে ব্যয় করা হবে। খবর: রয়টার্স।
চীনের অর্থমন্ত্রী লান ফো’য়ান ও অন্য কর্মকর্তারা একটি বহুল প্রত্যাশিত সংবাদ সম্মেলনে বন্ড ছাড়ার ঘোষণা দেন। অর্ধনীতি চাঙা করার লক্ষ্য নিয়ে গত সপ্তাহে বেশ কিছু পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়। এসব পদক্ষেপের মধ্যে ছিল সুদের হার কমানো ও ব্যাংকগুলোর জন্য অতিরিক্ত অর্থের ব্যবস্থা করা।
বছরের পর বছর ধরে চলা আবাসনশিল্পের সংকট ও ভোক্তাদের কম কেনাকাটার কারণে চীনের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়েছে। কর্মকর্তারা আশা করছেন, সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলোর কারণে অর্থনীতির শ্লথগতি ধারা ঠেকানো এবং চলতি বছরে ৫ শতাংশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে। পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অনেক মনে হলেও চীনের জন্য এই হার বেশ কম। কারণ দেশটি বছরের পর বছর দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
লান ফো’য়ান শনিবার বলেছেন, বেইজিং ট্রেজারি বন্ডের ব্যবহার আরও বাড়াবে এবং একই সঙ্গে অতি দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ বন্ড বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য আগামী তিন মাসে বিশেষ বন্ডের মাধ্যমে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি তোলার ব্যবস্থা করা যাবে। লান ফো’য়ান আরও জানান, রাষ্ট্র খাতের বড় ব্যাংকগুলোর সহায়তার জন্য বিশেষ সরকারি বন্ড ছাড়ারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে তিনি জানাননি যে এই বন্ড ছেড়ে সরকারি ঠিক কী পরিমাণ অর্থের সংস্থান করার পরিকল্পনা করছে।
এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারগুলোর ঋণ করার সীমাও বাড়িয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো অবকাঠামো নির্মাণে আরও বেশি অর্থ খরচ করতে পারবে। সে কারণে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মীদের চাকরি রক্ষা করা যাবে। উপ–অর্থমন্ত্রী লিয়াও মিন বলেন, এর ফলে স্থানীয় সরকার ও নির্মাণ কোম্পানিগুলোর তারল্য ও ঋণ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে বেইজিং আরও বেশি আর্থিক প্রণোদনার পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিশ্লেষকরা কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝিওয়েই ঝ্যাং বলেন, মূল কথা হলো বাজারে আরও বেশি বন্ড ছাড়া ও আরও রাজস্ব ঘাটতি হজম করার সক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে।
চীনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা কম, ফলে ভোগও কমে গেছে। পরিস্থিতির পরিবর্তনে চীনের নীতিনির্ধারকেরা একগুচ্ছ প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণের সুদের হার কমানো ও নিয়মনীতি শিথিল করা। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে পুরোপুরি চাঙা করতে আরও পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। সরকারি পদক্ষেপ নেয়ার পর চীনের শীর্ষ ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে চালু থাকা বন্ধকি ঋণের সুদের হার কমানো হবে। সুদের হার কমানোর এই সিদ্ধান্ত চলতি মাসের ২৫ তারিখ থেকে কার্যকর হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না, অ্যাগ্রিকালচারাল ব্যাংক অব চায়না, ব্যাংক অব চায়না এবং চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংকসহ বড় ব্যাংকগুলো ঘোষণা করেছে, তারা ধাপে ধাপে সুদের হার কমিয়ে আনবে। কয়েকটি বড় শহরে দ্বিতীয় বাড়ির জন্য নেয়া ঋণ বাদে বাকি সব ঋণের জন্য ব্যাংকগুলো ব্যবস্থা নেবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক বছরের জন্য যে ঋণ দেয়া হয়, তার সুদের হার গত মাসে কমিয়েছে বেইজিং। এছাড়া একটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে সর্বনিম্ন যে পরিমাণ অর্থ হাতে রাখতে হয়, সেই হারও কমানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি সপ্তাহে বিভিন্ন কোম্পানির জন্য শত কোটি ডলারের ব্যবস্থা করেছে, যাতে তারা বাজার থেকে শেয়ার কিনতে পারে।