তহবিল সংকটে আগস্ট-অক্টোবরের আংশিক ও নভেম্বর-এপ্রিলের পুরো বিল বকেয়া পড়েছে
ইসমাইল আলী: বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বসে রয়েছে। তবে যেটুকু চলছে তার বিলও নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে রেন্টাল ও আইপিপির (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া পড়েছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া বিল পড়েছে ৩৩ হাজার ১০৫ কোটি টাকা।
পিডিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিল বকেয়া পড়েছে ২৫ হাজার ৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় বকেয়া ১২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বকেয়া চার হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বকেয়া সাত হাজার ৬২১ কোটি টাকা এবং সৌর বিদ্যুতের বিল বকেয়া ৪৯২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে সরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগস্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিল বকেয়া পড়েছে ছয় হাজার ৫২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বকেয়া দুই হাজার ১৭ কোটি টাকা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বকেয়া চার হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা এবং সৌর বিদ্যুতের বিল বকেয়া সাত কোটি টাকা। এছাড়া পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া গ্যাস বিল রয়েছে আরও এক হাজার ৫১৫ কোটি টাকা।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত আগস্টের বিলের প্রায় পুরোটাই পরিশোধ করেছে পিডিবি। ওই মাসে শুধু সরকারি গ্যাসচালিত কেন্দ্রের বিল বকেয়া রয়েছে ১২৪ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের আংশিক বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তবে সেপ্টেম্বরের এখনো বিল বকেয়া রয়েছে এক হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ৩২০ কোটি টাকা ও গ্যাসচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ২৮৯ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারি খাতের ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রের বকেয়া রয়েছে ২৭৫ কোটি টাকা ও গ্যাসচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ৪৪০ কোটি টাকা।
একইভাবে অক্টোবরের বিল বকেয়া রয়েছে এক হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ৫১১ কোটি টাকা ও গ্যাসচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ২৭৪ কোটি টাকা। আর সরকারি খাতের ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রের বকেয়া রয়েছে ২৯৭ কোটি টাকা ও গ্যাসচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ২৫৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের কয়লা ও সোলারচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোনো বিল বকেয়া নেই। তবে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ছয় মাসের পুরো বিলই বকেয়া রয়ে গেছে।
সূত্রমতে, নভেম্বর বিল বকেয়া রয়েছে দুই হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি কেন্দ্রের বকেয়া এক হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ও সরকারি কেন্দ্রের বকেয়া ৭৮৬ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের মধ্যে ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রের বকেয়া এক হাজার ২৯০ কোটি টাকা, গ্যাসচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ৪৬৯ কোটি টাকা, কয়লাচালিত কেন্দ্রে বকেয়া ২১১ কোটি টাকা এবং সোলারচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ১৩ কোটি টাকা। আর সরকারি খাতের ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ২৯৮ কোটি টাকা, গ্যাসচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ৪৮৬ কোটি টাকা এবং সোলারচালিত কেন্দ্রের বকেয়া এক কোটি টাকা। এছাড়া পিডিবির নিজস্ব কেন্দ্রের গ্যাস বিল বকেয়া ১৩৭ কোটি টাকা।
পরের মাসের (ডিসেম্ব) বিল বকেয়া রয়েছে চার হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি কেন্দ্রের বকেয়া তিন হাজার ৩০৪ কোটি টাকা ও সরকারি কেন্দ্রের বকেয়া ৭১২ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের মধ্যে ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রের বকেয়া এক হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা, গ্যাসচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ৪৮০ কোটি টাকা, কয়লাচালিত কেন্দ্রে বকেয়া এক হাজার ৬২ কোটি টাকা এবং সোলারচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ৭৩ কোটি টাকা। আর সরকারি খাতের ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ২২১ কোটি টাকা, গ্যাসচালিত কেন্দ্রের বকেয়া ৪৮৯ কোটি টাকা এবং সোলারচালিত কেন্দ্রের বকেয়া এক কোটি টাকা। এছাড়া পিডিবির নিজস্ব কেন্দ্রের গ্যাস বিল বকেয়া ১৩৮ কোটি টাকা।
একইভাবে জানুয়ারি মাসে বিল বকেয়া রয়েছে চার হাজার ৮৯২ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারির পাঁচ হাজার ৭১২ কোটি টাকা, মার্চের ছয় হাজার ২৫৪ কোটি টাকা এবং এপ্রিলের ছয় হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। এসব বকেয়া নিয়মিত পরিশোধ না করায় তহবিল সংকটে পড়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বিল জমা দেয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা পরিশোধের শর্ত রয়েছে চুক্তিতে। তা পালন না করায় পিডিবির কাছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের ওপর সুদ দাবি করেছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।