নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাসে দেশে ৩৪ কোটি সাত লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। একইসঙ্গে প্রতিবেদনে মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায়ের তথ্য জানানো হয়।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ‘মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রয়ে গৃহীত কার্যক্রম’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন গতকাল বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হয়। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ১৩ হাজার ৫৯৩টি ফার্মেসি পরিদর্শন করে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫৭২টি মামলা দায়ের করেন। এতে এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। একইসঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে দুটি ফার্মেসি সিলগালা করা হয়। ওই দুই মাসের মধ্যে ৩৪ কোটি সাত লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘আদালত শুনানি শেষে আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোক্তা অধিকার অধিদফতরকে ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধের কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালত ওষুধ প্রশাসনসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে বলেছেন যেন বাংলাদেশের বাজারে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি না হয়। ওষুধশিল্প সমিতিকে বলেছেন, ইংরেজির পাশাপাশি যেন বাংলায় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ও মূল্য লেখা থাকে, সেটা বিবেচনা করতে।
প্রসঙ্গত, দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে গত ১১ জুন ‘ঢাকায় ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পরে ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন গত ১৭ জুন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। সেই রিটের শুনানি নিয়ে গত ১৮ জুন মেয়াদোত্তীর্ণ সব ওষুধের বিক্রি বন্ধ এবং তা এক মাসের মধ্যে ধ্বংস করে ফেলার পর হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর রেজিস্টার্ড লাইসেন্সপ্রাপ্ত ওষুধ কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার করে ধ্বংসের আদেশ দেয়। সেই আদেশ প্রতিপালন করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এদিকে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রির কারণে যাদের জেল-জরিমানা হয়েছে, তারা যদি আবার একই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত হন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, ‘অভিযানের সঙ্গে আমরা একমত। নকল ওষুধ যেন বাজারে না থাকে, এটা আমরাও চাই। একটা আবেদন ছিল ওষুধের নাম যেন বাংলায় লেখা থাকে। আমরা প্যাকেট খুলে দেখিয়েছি, বাংলায় লেখা আছে। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ইংরেজিতে লেখা। আদালত স্ট্রিপেও (ওষুধের পাতায়) বাংলায় লেখা চেয়েছেন। স্ট্রিপে ইংরেজিতে লেখা আছে। আমরা বলেছি, ফ্যাক্টরি মালিকদের সঙ্গে বসব। বসে যতটুকু সম্ভবÑঅলরেডি অনেকগুলো বাংলায় হয়ে গেছে। আদালতের চাওয়া শতভাগ যেন হয়। আমাদের বিদেশেও ওষুধ পাঠাতে হয়। তাই সবকিছু ঠিক করে একটি প্রতিবেদন দেব।’
জনস্বার্থে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর সারা দেশে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার, জব্দ ও ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ২৮ জুন রুলসহ নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহ, সংরক্ষণ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ?নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।