মো. আসাদুজ্জামান নূর: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল মঙ্গলবার মূল্য সূচকের সামান্য পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে টাকার অঙ্কে লেনদেন কমেছে বড় ব্যবধানে। ৩৫ কার্যদিবস পরে লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের ছক কষছেন। পোর্টফোলিও রিব্যালেন্সিংয়ের কারণে বিক্রয় চাপে পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। গতকালের লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেনে অংশ নেয় ৩৭৬টি কোম্পানি। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৩টির, কমেছে ১৫৪টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪৯টির। এর প্রভাবে গতকাল ১১টি খাতে দরপতন হয়েছে। বিপরীতে মাত্র আটটি খাতে দর বৃদ্ধি দেখা গেছে।
দিন শেষে ডিএসইতে ৯০৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে; যা আগের দিনের চেয়ে ২৩২ কোটি ১১ লাখ টাকা কম। এর আগে লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছিল গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে। ২ জানুয়ারি ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৮৯৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ কমলেও, লেনদেনে আধিপত্য ছিল প্রধান খাতগুলোর। ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ লেনদেন করে শীর্ষে ছিল বিবিধ খাত। এদিন ৬১ শতাংশের বেশি কোম্পানির দরপতন হয়েছে খাতটিতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। লেনদেনের ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল খাতটির দখলে। এই খাতেও সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে। গতকাল ৩৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৫৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। তবে তৃতীয় স্থানে থাকা বস্ত্র খাতে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ শেয়ারের দাম বাড়তে দেখা গেছে। ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ লেনদেনের দিনে খাতটিতে ৬৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। আর ২৪ শতাংশ কোম্পানির দরপতন হয়েছে।
এছাড়া প্রকৌশল খাতে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, খাদ্যে আট দশমিক ৮৮ শতাংশ ও আইটি খাতে পাঁচ দশমিক ৭৪ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্য খাতে ৫২ ও আইটি খাতে ৯০ শতাংশের বেশি কোম্পানির দর বৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে বেশিরভাগ খাতে দরপতনের কারণে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ছয় হাজার ৯১৭ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএস৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচক ৩ পয়েন্ট কমেছে।
সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ। এর পরেই রবির শেয়ারদর ১ দশমিক ০৮ শতাংশ হ্রাসের কারণে সূচক কমেছে ১ দশমিক ৯২ পয়েন্ট। আর ওয়ালটন হাইটেকের শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ দরপতনে সূচক কমেছে ১ দশমিক ৭ পয়েন্ট।
এছাড়া বেক্সিমকো শূন্য দশমিক ৯৭ পয়েন্ট, স্কয়ার ফার্মা শূন্য দশমিক ৯ পয়েন্ট, লিনডে বিডি শূন্য দশমিক ৬৬ পয়েন্ট, তিতাস গ্যাস শূন্য দশমিক ৫৫ পয়েন্ট এবং সোনালী পেপার, পাওয়ার গ্রিড ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের শূন্য দশমিক ৫২ পয়েন্ট করে সূচক কমেছে। এই দশ কোম্পানির কারণে সূচক হারিয়েছে ১১ দশমিক ০৯ পয়েন্ট।
বিপরীতে সূচক বাড়াতে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোন। কোম্পানির শেয়ারদর শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে শূন্য দশমিক ৯৯ পয়েন্ট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৯৬ পয়েন্ট ইউনাইটেড পাওয়ার ও সাইফ পাওয়ারের কারণে তৃতীয় সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫৬ পয়েন্ট সূচক বেড়েছে।
এছাড়া সামিট পাওয়ার, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পেনিনসুলা চিটাগং, এডিএন টেলিকম, ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড সূচক বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচকে যোগ করেছে ৯ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট।