৩৯ বছরেও সম্পত্তি নিবন্ধন করেনি মেঘনা পেট্রোলিয়াম

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ ও পলাশ শরিফ: ৩৯ বছর ধরে ঝুলে আছে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের নামে সম্পত্তি রেজিস্ট্রি বা নামজারি প্রক্রিয়া। ফলে প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের কোম্পানির সম্পত্তির অধিকাংশই এখনও রয়ে গেছে বিলুপ্ত এ্যাসো ও দাউদ পেট্রোলিয়ামের নামে। রেজিস্ট্রি বা নামজারির প্রক্রিয়াটি ‘সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ’ উল্লেখ করে তিন যুগেরও বেশি সময় পার করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অধীনস্থ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি।
কোম্পানির সর্বশেষ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। পাশাপাশি নামজারি করা না হলে ভবিষ্যতে মেঘনা পেট্রোলিয়াম বড় ধরনের আইনি জটিলতায় পড়তে পারে বলে হুদাভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানিসহ দুই নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান মন্তব্য করেছে।
নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭৮ সালে এ্যাসো ও দাউদ পেট্রোলিয়ামের নামে থাকা স্থায়ী সম্পদের মালিকানা পায় রাষ্ট্রায়ত্ত মেঘনা পেট্রোলিয়াম। এরপর ওই সম্পত্তির দখল বুঝে নিয়ে তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এই সুদীর্ঘ সময়েও সম্পত্তিগুলো মেঘনা পেট্রোলিয়ামের নামে রেজিস্ট্রি কিংবা নামজারি করা হয়নি। আইনগত ঝামেলা, ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ হওয়ার কারণে স্থাবর ওই সম্পত্তি রেজিস্ট্রি বা নামজারির জন্য উদ্যোগ নেয়নি মেঘনা পেট্রোলিয়াম।
এর আগে প্রতিষ্ঠানটির ৩৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়। বিনিয়োগকারীদের চাপের মুখে সম্পত্তির নামজারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকা সম্পত্তি মেঘনা পেট্রোলিয়ামের নামে নামজারির প্রক্রিয়াও শুরু হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের চৌধুরী ব্রাদার্সের নামে থাকা সম্পত্তির নামজারি হয়েছে। রাজধানীর সম্পত্তির বিষয়ে আরেকটি আবেদন আদালতে প্রক্রিয়াধীন।
আলাপকালে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল্লাহ আল খালেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সম্পত্তির নামজারির বিষয়টি অনেক দূর এগিয়েছে। এরই মধ্যে আমরা চট্টগ্রামের সম্পত্তির নামজারি প্রক্রিয়া শেষ করেছি। অন্যটিও চলমান রয়েছে। জটিলতা এড়াতেই প্রক্রিয়ার অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে চাইছি না।’
প্রায় শতকোটি টাকার সম্পত্তির নামজারি না হওয়া প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। নাম প্রকাশে ডিএসইর একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট এ প্রসঙ্গে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘একটি কোম্পানির সম্পত্তি রেজিট্রি করতে এত সময় লাগার কথা নয়। এখানে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এ কোম্পানির কোনো সমস্যা হলে তার দায়ভার বিনিয়োগকারীদের ওপর বর্তাবে।
অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘কোম্পানির সম্পত্তি যাদের নামে রেজিস্ট্রি রয়েছে, তারা যদি কোনো সমস্যা না করে, তাহলে এ কোম্পানির শেয়ার বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে জটিলতা থাকার কথা নয়। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে সম্পত্তি যে নামে রেজিস্ট্রি রয়েছে, তার ওপর। তবে রেজিস্ট্রি না থাকলেও এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানের নিশ্চিত অন্য কোনো চুক্তিনামা থাকার কথা’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিপিসির সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া আড়াই কোটি টাকা: মেঘনা পেট্রোলিয়ামের স্থাবর সম্পত্তির নামজারি নিয়ে জটিলতার পাশাপাশি বিপিসি ও তার অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কাছে বাকিতে তেল বিক্রি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের হিসাবে, ২০০৩ সাল থেকে বিপিসিও তার অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কাছে বাকিতে তেল বিক্রির কারণে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তিন কোটি আট লাখ ২৩ হাজার ১৩১ টাকা বকেয়া দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে দুই কোটি ৩৬ লাখ টাকা ‘সম্ভাব্য অনাদায়ী’ হিসেবে রাখা হয়েছে। ওই পাওনা আদায়ের ‘সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ’ বলেও মন্তব্য করেছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান।
আপত্তির বিষয়ে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের জবাবে বলা হয়েছে, বিপিসির মধ্যস্থতায় আন্তপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অসমন্বিত হিসাবগুলোর মধ্যে মিলামিলকরণে মেঘনা পেট্রোলিয়াম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিপিসি ও তেল কোম্পানিগুলোর মধ্যে হিসাবের জটিলতা কাটানোর জন্য বিপিসি কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে ২০১৪ সালে বিপিসির সঙ্গে দেনা-পাওনার ঝামেলা মিটেছে। এজন্য আবারও নতুন করে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কোম্পানি সচিব মো. কামরুল হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটি বিপিসি ও তার অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চলমান লেনদেন প্রক্রিয়া। জটিলতা কাটিয়ে উঠতে আমরা কাজ করছি। বিপিসির সঙ্গে জটিলতা নেই, আছে অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। বিষয়গুলো নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১০ কোটি ৮২ লাখ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশের মালিক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এছাড়া ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। সম্পদমূল্যের তুলনায় শেয়ারদর প্রায় পৌনে তিনগুণ বেশি হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে। বিগত দেড় বছরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মেঘনা পেট্রোলিয়ামের প্রায় পাঁচ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন। এদিকে আয়-মুনাফা কমলেও লভ্যাংশ দেওয়ার হার বাড়ছে। সর্বশেষ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০