Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 10:32 am

৪০ ক্যাটেগরিতে রবির ফাঁকি ৮৬৭ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বহুজাতিক মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা ৪০ ক্যাটেগরিতে প্রায় ৮৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা রাজস্ব ও অন্যান্য চার্জ ফাঁকি দিয়েছে। অডিটের মাধ্যমে এই ফাঁকি খুঁজে পায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, অডিটে ভ্যাট-ট্যাক্স, হ্যান্ডসেট রয়ালটি, রেভিনিউ শেয়ারিং, স্পেকট্রাম চার্জ ও লাইসেন্স ফিসহ মোট ৪০ ক্যাটেগরিতে এই ফাঁকির হিসাব পাওয়া গেছে। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৫ সালের জন্য এই অডিট করা হয়েছে। অডিটে বিটিআরসির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছে মসিহ্ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানি এবং ভারতীয় প্রতিষ্ঠান পিকেএফ শ্রীধর অ্যান্ড সান্থনাম এলএলপি।
১০ কার্যদিবসের মধ্যে পাওনা বাবদ এ অর্থ পরিশোধের জন্য রবি আজিয়াটাকে নোটিস দিয়েছে বিটিআরসি। ঈদের ছুটি থাকায় আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে রবিকে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে নির্ধারিত সময়ে এ অর্থ পরিশোধ না করলে অপারেটরটির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘অডিটের হিসাবমতে ৪০ ক্যাটেগরিতে রবির কাছে বিটিআরসির পাওনা প্রায় ৮৬৭ কোটি টাকা। পাওনা আদায়ে ইতোমধ্যেই রবিকে জানানো হয়েছে। সেখানে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এই পাওনা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি এনবিআরকে অবহিত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে সব অপারেটর সমান, কোনো অপারেটরকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। পাওনা আদায়ে রবিকে যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রবির করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবির শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রবি এই ত্রুটিপূর্ণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সব পাওনা দাবিকে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। সম্পূর্ণ যুক্তিহীন এই দাবির আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। সংশ্লিষ্ট টেলিযোগাযোগ আইন অনুসারে নিরীক্ষার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী অপারেটর কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিনা এবং তারা সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি প্রদান করছে কিনাÑএ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার কথা। অথচ তথাকথিত এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা যাচাইয়ের দিকে মনোযোগ না দিয়ে রবির বিরুদ্ধে আর্থিক দাবি প্রতিষ্ঠায় বেশি মনোযোগী ছিল।’
বিটিআরসির তথ্যমতে, ফাঁকি দেওয়া অর্থের মধ্যে রবি আজিয়াটা ভ্যাট ও অন্যান্য ট্যাক্সের টাকা কম দেয় প্রায় ১৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ অর্থ পাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ইতোমধ্যে এ বিষয়গুলো অবহিত করে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠিও প্রদান করেছে বিটিআরসি।
এর আগে প্রায় দেড় বছর কাজ করার পর অডিট দল রবির এক হাজার ২৫১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ফাঁকি বের করে। তবে বিটিআরসি, অডিট দল এবং রবির কয়েক দফা বৈঠকের পর সেটি দাবি করা অংকে (৮৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা) নেমে আসে।
ইকরাম কবির আরও বলেন, ‘নিরীক্ষণের সময়, প্রথা অনুসারে নিরীক্ষক কোম্পানি আমাদের মতামত না নেওয়ায় বিস্মিত হয়েছি। এ থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, নিরীক্ষকের যাচাই প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ। আর তাই এ নিরীক্ষার মান নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক প্রশ্ন। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এ প্রতিবেদনে আমাদের কার্যক্রমের সঠিক ও নিরপেক্ষ চিত্র ফুটে ওঠেনি। এছাড়া ওই নিরীক্ষার আলোকে তৈরি দাবিনামার একটি বড় অংশ নিয়ে আদালতে বিরোধ চলছে। এক্ষেত্রে নিরীক্ষকরা বিভিন্ন সূত্র থেকে তাদের পর্যবেক্ষণকে যাচাই করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন এটাও প্রমাণ করে যে, নিরীক্ষক কোম্পানির টেলিকম ইকো-সিস্টেম এবং এ শিল্পের বিকাশের ইতিহাস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আমাদের আবেদন, তারা যেন বিশ্বের নামকরা সবচেয়ে বড় যে চারটি নিরীক্ষক কোম্পানি রয়েছে, তাদের মধ্য থেকে কাউকে দিয়ে নিরীক্ষাটি পুনরায় পরিচালনা করবে।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও মূল্য সংযোজন কর ফাঁকির অভিযোগে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। সরকারের প্রায় ১৯ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বকেয়া থাকায় কয়েক দফা নোটিস প্রদান করা হলেও তাতে কোনো সাড়া দেয়নি তারা। ফলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এছাড়া ২০১৭ সালেও বহুজাতিক এই অপারেটরটি অবৈধভাবে রেয়াত গ্রহণ, রবি-এয়ারটেলের মার্জ ফি ও স্পেকট্রাম চার্জের বিপরীতে এবং ইন্টারকানেকশন চার্জের বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধ না করে ৯২২ কোটি টাকা ফাঁকি দিলে তখন ১৫ দিনের মধ্যে ভ্যাট পরিশোধ করতে পৃথক পাঁচটি দাবিনামা জারি করে এনবিআরের অধীনস্থ বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিই-ভ্যাট)।