Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 1:16 am

৪০% বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বসে থাকবে চলতি বছর

ইসমাইল আলী: দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছাড়িয়েছে সাড়ে ২৬ হাজার মেগাওয়াট। যদিও গত বছর গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এরপরও উৎপাদনে আসছে নতুন নতুন কেন্দ্র। সেগুলো জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে চলতি বছর শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট। তবে সক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না বিদ্যুৎ চাহিদা। এতে বছর শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বসে থাকবে। যদিও শীতে এ হার আরও বেড়ে যাবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, নতুন বিভিন্ন বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ছোট কেন্দ্র অবসরে যাবে। ফলে চলতি বছর নতুন যুক্ত হবে তিন হাজার ১৯৬ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে বছর শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২৯ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু চলতি বছর সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। এতে বছর শেষে ১১ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকবে। মোট উৎপাদন সক্ষমতার তা ৪০ দশমিক ০৭ শতাংশ।

আগামী বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে দুই হাজার মেগাওয়াট। এতে ২০২৫ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু সে সময় সর্বোচ্চ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৯ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এতে ২০২৫ সাল শেষে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, যা মোট সক্ষমতার ৩৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

২০২৬ সালে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে আরও এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এতে ওই বছর শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। কিন্তু সে সময় সর্বোচ্চ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ২০ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। এতে ২০২৬ সাল শেষে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, যা সক্ষমতার ৩৭ দশমিক ২০ শতাংশ।

২০২৭ সাল শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আরও যুক্ত হবে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এতে ওই বছর শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৪ হাজার মেগাওয়াট। যদিও সে সময় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াবে ২২ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। ফলে চাহিদার সর্বোচ্চ ব্যবহার হলেও সে সময় ১১ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকবে, যা সে সময়ের সক্ষমতার ৩৫ শতাংশ।

জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের মাস্টারপ্ল্যান সংশোধন করা হয়েছে। আগামী বছরগুলোয় বাংলাদেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত হবে তা পুনরায় নিরূপণ করা হয়েছে। সে অনুপাতে উৎপাদন সক্ষমতার প্রাক্কলন কমানো হয়েছে। এতে বসে থাকা বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার হার আগামী কয়েক বছরে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে পর্যায়ক্রমে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে চাহিদার ১০ শতাংশ অধিক ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র রাখলেই চলে। সে হিসাবে চলতি বছর দেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেই চলত। তবে চাহিদার চেয়ে বেশি সক্ষমতার কেন্দ্রগুলোয় বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। এতে সরকারি অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

তারা আরও বলেন, আগামীতে সরকার বিদ্যুতের ভর্তুকি তুলে দিতে চাইছে। অথচ বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য প্রচুর অর্থ ঢালতে হবে। আর তা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের থেকে তোলা হবে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া বন্ধ করা উচিত।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমানে দেশে অলস বসে আছে প্রায় ৩৮ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র। উৎপাদন না হলেও বেসরকারি খাতের বিভিন্ন কেন্দ্রের জন্য মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে। ভারসাম্যহীন পরিকল্পনার কারণে সরকারকে এ খাতে প্রতি বছর প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ২০২৭ সাল পর্যন্ত নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রাখা উচিত।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সাল শেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৫০৪ মেগাওয়াট। তবে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। যদিও ডলার সংকটে জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি এসব কেন্দ্রে। এতে বছরজুড়েই লোডশেডিং চলে। তবে গত বছর ১৯ এপ্রিল দেশে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এর পরও সেদিন লোডশেডিং হয়েছিল।

বর্তমানে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ১১ হাজার ১৭০ মেগাওয়াট এবং বেসরকারি খাতে রয়েছে ১০ হাজার ৮১৭ মেগাওয়াট। এছাড়া সরকারি-বিদেশি যৌথ উদ্যোগের দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা এক হাজার ৮১৭ মেগাওয়াট। বেসরকারি এবং যৌথ উদ্যোগের কেন্দ্রগুলোর জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে ১৭ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এর বাইরে বর্তমানে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয় দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট।