জিলবাংলা সুগার

৪১ কার্যদিবসে শেয়ারদর বাড়ল ৪০০ শতাংশ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: রূপকথার আলাদিনের চেরাগকে হার মানাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জিলবাংলা সুগারের শেয়ার। কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই লাগামহীনভাবে বাড়ছে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। মাত্র ৪১ কার্যদিবসের ব্যবধানে এই কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ, যা অবাক করেছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে। অবাক কোম্পানি কর্তৃপক্ষও। তারাও অস্বাভাবিকভাবে শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে গুজব রয়েছে রুগ্ণ এই প্রতিষ্ঠানটিকে খুব শিগগির মদ তৈরির অনুমোদন দেওয়া হবে। এতে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। মূলত এই গুজবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ফায়দা হাসিল করছেন একধরনের সুযোগ সন্ধানী বিনিয়োগকারীরা।

বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ আলী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘জানতে পেরেছি আমাদের প্রতিষ্ঠানটিকে আধুনিকীকরণ করা হবে।’ কিন্তু কীভাবে করা হবে সে বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পরিষ্কার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘শেয়ারদর কেন বাড়ছে সে বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা নেই। তবে কারখানা আধুনিকীকরণ করা হবে বিনিয়োগকারীরা এটাকে হয়তো ইতিবাচক ভেবেছেন। এই বিষয়টি দর বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতেও পারে।’

কোম্পানিটির সাম্প্রতিক বাজার চিত্রে দেখা যায়, ৪১ কার্যদিবস আগে এই শেয়ারের দর ছিল ৩১ টাকা। এরপর থেকে কোনো সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই এই শেয়ারদর অস্বাভাবিকহারে বাড়তে থাকে। সবশেষ কার্যদিবসে সে শেয়ার লেনদেন হয় ১৫০ টাকায়। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি শেয়ারদর বেড়েছে ৩৮৪ শতাংশ।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানের কোনো সংবেদনশীল তথ্য থাকলেও এভাবে দর বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। কিছু বিনিয়োগকারী এখান থেকে লাভবান হলেও একটা সময় বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন। তাই এখনই তাদের সচেতন হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তারা।

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যে কোনো কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির নির্দিষ্ট কারণ থাকা উচিত। বিশেষ করে কখনও যদি দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকহারে বাড়ে, তখন বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি সচেতন থাকা দরকার। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই এর উল্টো চিত্র দেখ যায়। অতি লাভের আশায় এসব শেয়ারের দিকে ছুটে যান তারা। এর মধ্যে থেকে কিছু বিনিয়োগকারী মুনাফা করতে পারলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফিরে আসেন বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী।

প্রসঙ্গত, ৩০ বছর ধরে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে থাকা ‘জিলবাংলা সুগার’ গত ২৯ বছর ধরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ  দিতে পারেনি। বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ভারি হচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষক জানিয়েছেন, এ প্রতিষ্ঠানটির মুনাফায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কোম্পানির ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের সহায়তা দরকার বলেও জানান নিরীক্ষক।

জানা যায়, জিলবাংলা সুগার মিলের উৎপাদন সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নিরীক্ষক। সর্বশেষ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এ শঙ্কার কথা জানান নিরীক্ষক। প্রতিবেদনে জানানো হয়, কোম্পানিটির পক্ষে আগামী কয়েক বছরের মুনাফা করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে সরকারের সহায়তা ছাড়া উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

মাত্র ছয় কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের জিলবাংলা সুগারের পুঞ্জীভূত লোকসান রয়েছে ৩৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকা।  শেয়ারপ্রতি পুঞ্জীভূত লোকসান রয়েছে ৬০০ টাকার বেশি। এদিকে প্রতি বছরই লোকসান আরও ভারি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির। ২০১৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩২ কোটি টাকা, পরের বছর তা বেড়ে হয়  ৪৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে তা আরও বেড়ে ৬২ কোটি টাকা হয়। অন্যদিকে সর্বশেষ তিন প্রান্তিক মিলে (জুলাই ১৯ থেকে মার্চ ২০) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪৪ টাকা ৭২ পয়সা করে।

তথ্যমতে, জিলবাংলা সুগার ১৯৮৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। পুঁজিবাজারে এসেই লোকসানের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানি সূত্র জানায়, এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডাররা সর্বশেষ লভ্যাংশ পান ১৯৯০ সালে। ওই বছর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। এরপরের বছর অর্থাৎ ১৯৯১ সালে শেয়ারহোল্ডারদের হতাশ করে নো-ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশের দেখা পাননি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০