৪৬% বেশি দামে জেট ফুয়েল কিনছে দেশি এয়ারলাইনসগুলো

20

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ৪৮ টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে গুনতে হয় ৭০ টাকা। প্রতি লিটারের টাকায় পার্থক্য দাঁড়ায় ২২ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৪৬ শতাংশ বেশি দামে জ্বালানি কিনতে হচ্ছে দেশি এয়ারলাইনসগুলোকে।

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে প্রতি টন জ্বালানি তেল জেট ফুয়েলের দাম ৭৭৭ ডলার হলেও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে গুনতে হয় ১১০৮ ডলার। এ মূল্য পার্থক্যজনিত কারণে দেশে এয়ারলাইনস শিল্প বিকাশ ব্যাহত, বিদেশিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়া ও পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে দেশি এয়ারলাইনসগুলো পরিচালনায় বেগ পেতে যাচ্ছে বলে জানান অ্যাভিয়েশন অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) নেতারা।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্যমতে, প্রতি বছর জেট ফুয়েলের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আকাশযানের জ্বালানি জেট ফুয়েল বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৪৭ হাজার টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এ বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৩৮ হাজার টন। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল তিন লাখ ২৩ হাজার টন।

এদিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি লিটারের জেট ফুয়েলের দাম ৬০ সেন্ট এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি লিটার পড়ে ৬১ সেন্ট করে। আর অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ৭০ টাকা ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি লিটার পড়ে ৭১ টাকা। অপরদিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে প্রতি টন জ্বালানি তেল জেট ফুয়েলের দাম ৭৭৭ ডলার হলেও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ভ্যাটসহ গুনতে হয় ১১০৮ ডলার। ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের চেয়ে বেশি দাম দিতে হয় এয়ারলাইনস সংস্থাগুলোকে।

এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবি জানিয়েছে এওএবি। সংগঠনটির মতে, জেট ফুয়েলের মূল্যে অসম বৈষম্য এখন অ্যাভিয়েশন খাতের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ, যা দূর না হলে দেশি উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর জন্য ব্যবসায় পরিচালনা করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। বেসরকারি এয়ারলাইনসের একাধিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষয়টিকে ভারসাম্যহীন উল্লেখ করে বলেন, অ্যাভিয়েশন শিল্পের প্রবৃদ্ধি গতিশীল করায় এটি বড় অন্তরায়। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এয়ারলাইনসগুলো আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের তুলনায় বিশেষ কর সুবিধা পায়। বাংলাদেশে হচ্ছে এর উল্টোটা। এর সুফল পাচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো।

এ বিষয়ে বেসরকারি এয়ারলাইনস সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ডিজিএম (মার্কেটিং অ্যান্ড পিআর) কামরুল হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশি এয়ারলাইনসগুলোকে অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটের ক্ষেত্রে বেশি দামে জেট ফুয়েল কিনতে হচ্ছে। এতে একদিকে এয়ারলাইনসগুলোর ব্যয় বাড়ছে। অন্যদিকে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে। এর চূড়ান্ত প্রভাব পড়ছে যাত্রীদের টিকিটের মূল্যে।

জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (বিপণন) মীর আলী রেজা শেয়ার বিজকে বলেন, জেট ফুয়েলে দাম আসলে সরকারি পলিসির অনুসারে নির্ধারিত। এজন্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে। কেননা,

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে কলকাতা এয়ারপোর্টে যে দামে জেট ফুয়েল পাওয়া যাচ্ছে, আমাদের ঢাকা এয়ারপোর্টে একই দাম রাখা হচ্ছে। আবার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে তেল একটু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

জেট ফুয়েলের দাম প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশি এয়ারলাইনসগুলোকে কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য জ্বালানি তেলের দাম যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নিয়ে আসা উচিত। তেলের দাম কমানো অথবা ভ্যাট বাতিল কোনোটাই বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কাছে এ বিষয়ে সুপারিশ করা হবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০