নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোটকেন্দ্রে যেতে অসমর্থ, এমন চার ধরনের ভোটারের জন্য নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে চালু করা হয়েছে পোস্টাল ভোট। প্রবাসী, কারাবন্দি, নির্বাচনী এলাকার বাইরে বসবাসকারী ও শারীরিকভাবে অক্ষম ভোটাররা ডাকযোগে (পোস্টাল ব্যালটে) ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
সে হিসেবে দেশের ৬৮টি কারাগারের অন্তত ৮৬ হাজার কারাবন্দি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। তবে ডাকযোগে ভোটে তেমন সাড়া পড়েনি। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সারাদেশের ৩৪টি কারাগারের ৪৭ হাজারের বেশি কারাবন্দির মধ্যে মাত্র ১০ জন পোস্টাল ব্যালটে তাদের ভোট দিয়েছেন।
কারা কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, ভোট দেয়া ১০ কারাবন্দির মধ্যে সাতজন নারায়ণগঞ্জ কারাগারের, দুজন ময়মনসিংহের ও একজন মৌলভীবাজারের।
নারায়ণগঞ্জের জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন জানান, কারাগারে প্রায় এক হাজার ৬৭০ বন্দি রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গত মাসে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে বন্দিদের জানিয়েছিলাম, পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তারা ভোট দিতে পারবেন। প্রথমে প্রায় ৫০ বন্দি ভোট দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু পরে তাদের অনেকেই আর দেননি।’
ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচটি কারাগারে প্রায় পাঁচ হাজার ২০০ বন্দি রয়েছেন। আর ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় এক হাজার ৮০০ বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র দুজন পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিনিয়র জেল সুপার জাহানারা বেগম।
সিলেট রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. সগীর মিয়া জানান, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে চারটি জেলা কারাগারের মধ্যে ৬৭৭ বন্দির মধ্যে মৌলভীবাজারের মাত্র একজন ভোট দিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় ১০ হাজার বন্দি থাকলেও তাদের কেউই ভোটের জন্য আবেদন করেননি। সিনিয়র জেল সুপারিনটেনডেন্ট সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, ‘কয়েদিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে কোনো আগ্রহ দেখাননি।’
গাজীপুরের পাঁচটি কারাগারের প্রায় ১০ হাজার বন্দির মধ্যে কেউই ভোট দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি বলে জানান কর্মকর্তারা। একই চিত্র পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি প্রিজন আলতাব হোসেন বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালী কারাগারে প্রায় ১৬ হাজার বন্দি ও কয়েদি রয়েছেন। কিন্তু কেউই পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে চাননি।’
বরিশাল বিভাগের ছয়টি কারাগারে দুই হাজার ছয়শ’র বেশি বন্দি রয়েছেন; তারাও কেউ ভোটে আগ্রহ দেখাননি।
কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান বলেন, ‘আমরা পোস্টাল ব্যালটের বিষয়ে গত বছরের নভেম্বরে সারাদেশের ৬৮টি কারাগারে তথ্য প্রচার করেছি এবং জেলা কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে।’
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, চার ধরনের ভোটার পোস্টাল ভোট দিতে পারবেন। তারা হচ্ছেন নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী যিনি চাকরিসূত্রে নিজ এলাকার বাইরে বসবাস করেন ও কারাবন্দি।
ইসি বলছে, চাকরিসূত্রে নিজ এলাকার বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তি, কারাবন্দি ও প্রবাসীরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পোস্টাল ভোটের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আবেদন পাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা আবেদনকারী ভোটারের কাছে একটি পোস্টাল ব্যালট পেপার ও একটি খাম পাঠাবেন। সঙ্গে ভোট দেয়ার নির্দেশনা, ঘোষণাপত্র, একটি ছোট ও একটি বড় খামসহ প্রয়োজনীয় কিছু কাগজ সরবরাহ করবে ইসি। ওই ব্যালটে ভোট দেয়ার পর নির্ধারিত খামে করে ডাক বিভাগের সার্টিফিকেট অব পোস্টিংয়ের মাধ্যমে এটি ডাকযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফেরত পাঠাবেন ভোটার।
কেন্দ্রে ভোটদানে মার্কিং সিল ব্যবহার করা হলেও পোস্টার ব্যালটে টিক চিহ্ন দিতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দেশনা অনুসরণ করে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ব্যালট পেপারটি নির্ধারিত খামে রাখতে হবে। এরপর ওই ভোটারের পরিচিত অন্যকোনো ভোটারের সামনে ঘোষণাপত্রে সই করে তা ওই ভোটারকে দিয়ে প্রত্যয়ন করে নিতে হবে। নির্বাচনী এলাকার ভোটদান প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এটি পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে ভোটার নিরক্ষর বা প্রতিবন্ধী হলে অন্যদের সহযোগিতা নিতে পারবেন।