Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:40 am

৫০-১০০% পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন ৫৪ প্রতিষ্ঠানের

সাইমউল্লাহ সবুজ: বিদায়ী বছর ১৪ মে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর ছিল ৩৮ টাকা ৪০ পয়সা, যা ১৮ সেপ্টেম্বর দাঁড়ায় ৭৭ টাকা ১০ পয়সায়। বিমা খাতের এ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে ৩৮ টাকা ৭০ পয়সা বা ১০০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। একইভাবে বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারদর গেল বছর একটা নির্দিষ্ট সময় বেড়েছে ১৩ টাকা ৮০ পয়সা বা ১০০ শতাংশ। ২৬ ফেব্রুয়ারি এ কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ১৩ টাকা ৮০ পয়সা, যা ৩ নভেম্বর ২৭ টাকা ৬০ পয়সায় পৌঁছায়।

এভাবেই গেল বছর মন্দায় কাটা পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার উল্লেখযোগ্য ক্যাপিটাল গেইন হয়। তবে এর বেশিরভাগ কোম্পানিই স্বল্প মূলধনি ও লোকসানি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২০২৩ সালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেয়ারদরে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন করেছে ৫৪টি কোম্পানি।

এসব কোম্পানির মধ্যে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। আলোচ্য হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৮৭ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকা ৮১ পয়সা। ‘এ’ ক্যাটেগরির কোম্পানিটির ৬০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

বর্তমানে মোট শেয়ারের ৪৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ আছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ২৫ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার। আর বাকি ২৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

ক্যাপিটাল গেইনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ জুন সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। আলোচ্য হিসাববছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৮২ পয়সা এবং এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ৪১ পয়সা। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। তবে এর পরিশোধিত মূলধন ৭৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩১ দশমিক ৬৫ শতাংশ আছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ শেয়ার। আর বাকি ৫৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

১০০ শতাংশের কম ক্যাপিটাল গেইন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে পাট খাতের জুট স্পিনার্সের শেয়ারদর ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল ২১৪ টাকা ৪০ পয়সা ছিল, যা ৩১ মে ৪১৫ টাকা ৮০ পয়সায় পৌঁছায়। এ হিসাবে দর বেড়েছে ২০১ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। পাট খাতের কোম্পানি সোনালী আঁশের শেয়ারদর গেল বছরের ২৯ জানুয়ারি ছিল ৩৮৮ টাকা ৪০ পয়সা, যা ২৫ অক্টোবর ৭৪৫ টাকা ৬০ পয়সায় পৌঁছায়। এতে শেয়ারদর বেড়েছে ৩৫৭ টাকা ২০ পয়সা বা ৯১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বিমা খাতের কোম্পানি মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর গেল বছরের ১১ মে ছিল ২৯ টাকা ৯০ পয়সায়, যা ২৭ জুলাই ৫৬ টাকা ৬০ পয়সায় পৌঁছে। এতে শেয়ারদর বেড়েছে ২৬ টাকা ৭০ পয়সা বা ৮৯ দশমিক ২৯ শতাংশ।

তালিকায় পরের অবস্থানে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিমেন্ট খাতের হাইডেলবার্গ সিমেন্টের ৮৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং প্রিমিয়ার সিমেন্টের শেয়ারে ৫৫ দশমিক ২৮ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন হয়। বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের ৮৭ দশমিক ০৫ শতাংশ, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৮৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের ৭৪ দশমিক ০৬ শতাংশ, জনতা ইন্স্যুরেন্সের ৭২ দশমিক ১১ শতাংশ, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ৭১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ৬৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৬৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের ৬৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৬৭ দশমিক ১ শতাংশ, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৬৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের ৬৩ দশমিক ০৯ শতাংশ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের ৫৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের ৫২ দশমিক ৭০ শতাংশ, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৫২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৫২ দশমিক ০১ শতাংশ এবং নর্দান ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারে ৫১ দশমিক ১০ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন হয়।

এর বাইরে ওষুধ ও রসায়ন খাতে কোম্পানি নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের ৮৫ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারে ৫৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন হয় গেল বছর। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ারে ক্যাপিটাল গেইন হয় ৮৫ দশমিক ১০ শতাংশ, মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজের ৭৭ দশমিক ৬১ শতাংশ, রংপুর ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টসের ৬৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, বিচ হ্যাচারির ৬২ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং বঙ্গজের ৫৬ দশমিক ১১ শতাংশ।

বস্ত্র খাতে কোম্পানি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ৭৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, প্যাসিফিক ডেনিমসের ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের ৭৭ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং আল-হাজ্ব টেক্সটাইলের শেয়ারে ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন হয়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ারে ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং এডিএন টেলিকমের ৫৮ দশমিক ৭২ শতাংশ; জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে কোম্পানি ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশনের ৭৮ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্সের শেয়ারে ৫৩ দশমিক ৯২ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন হয় ২০২৩ সালে।

এদিকে প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ওইমেক্স ইলেকট্রোডের ৭৭ দশমিক ৭ শতাংশ, আজিজ পাইপসের ৭৫ শতাংশ, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেড ৫৬ দশমিক ১৪ শতাংশ ও সুহƒদ ইন্ডাস্ট্রিজের ৫৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ; পাট খাতের কোম্পানি নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ৭৬ দশমিক ২৮ শতাংশ; সেবা ও আবাসন খাতের শমরিতা হাসপাতালের ৭১ দশমিক ৫১ শতাংশ ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৬৬ দশমিক ৪০ শতাংশ, ব্যাংক খাতের মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৭৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং সিএপিম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ডে ৬০ দশমিক ৬০ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন হয়।

বিবিধ খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে এসকে ট্রিম অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ৬০ দশমিক ৬৯ শতাংশ, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের ৫৬ দশমিক ২৩ শতাংশ, ন্যাশনাল ফিড মিলের ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং চামড়া খাতের কোম্পানি এপেক্স ফুটওয়্যারের শেয়ারের দর বেড়েছিল ৫৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া কাগজ ও মুদ্রণ খাতের কোম্পানি পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলসের ৫২ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের শেয়ারদর ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।