Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:12 pm

৫১ ঘণ্টার পর আবারও জাহাজ ভিড়ল চট্টগ্রাম বন্দরে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূল অতিক্রমের পর আবহাওয়া অফিস সতর্ক সংকেত ৩ নম্বরে নামিয়ে আনায় ক্রমে সচল হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টার মধ্যে বহির্নোঙর থেকে একটি কনটেইনার জাহাজ টাগ বোটের সাহায্যে আবার জেটিতে নিয়ে আসেন বন্দরের পাইলটরা।

পরপর একে একে আনা হয় মোট আটটি জাহাজ। যদিও সতর্কতার অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে বন্দরের জেটি থেকে ১৯টি জাহাজ গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ প্রায় ৫১ ঘণ্টার পর আবারও বন্দর জেটিতে ভিড়ল পণ্যবাহী কনটেইনার ও কার্গো জাহাজ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সুপার সাইক্লোন আম্পানের কারণে আবহাওয়া অফিস পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে। এরপর ৯নং বিপদ সংকেত দেখানো হয়। আবহাওয়া অফিসে সতর্কতার কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অ্যালার্ট-৩ চালু করেছিল।

তবে আজ ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূল অতিক্রমের পর আবহাওয়া অফিস মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর দেখাতে বলার সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের নিজস্ব অ্যালার্ট তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে সকালের দিকে পাইলটদের বহির্নোঙর থেকে জাহাজ আনতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ বেলা ১১টায় বন্দরের পাইলটরা বহির্নোঙর থেকে একটি কনটেইনার জাহাজ টাগ বোটের সাহায্যে আবার জেটিতে নিয়ে আসেন।

পরপর একে একে আনা হয় মোট আটটি জাহাজ। পাশাপাশি বুম আপ করা ১৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেনও সচল করা হয়। যদিও সতর্কতার অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে বন্দরের জেটি থেকে ১৯টি জাহাজ গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

অর্থাৎ প্রায় ৫১ ঘণ্টা পেরুলে আবারও বন্দর জেটিতে ভিড়ল পণ্যবাহী কনটেইনার ও কার্গো জাহাজ। এছাড়া উজানে পাঠিয়ে দেওয়া লাইটার-কোস্টার ভ্যাসেলগুলো বাংলাবাজার থেকে শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বন্দর সীমানায় আস্তে আস্তে প্রবেশ করছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগের দিনের পোর্ট পারফরম্যান্স প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বন্দরের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের শুরুর আগে বিভিন্ন জেটি, বিশেষ বার্থ ও আউটারে মোট জাহাজ ছিল ৭০টি। এর মধ্যে ৭০টি জাহাজ থেকে কার্গো ও কনটেইনার খালাস হয়নি।

এর মধ্যে কনটেইনার জাহাজ ২২টি, অয়েল ট্যাংকার ১১টি, সাধারণ কার্গো জাহাজ ১৬টি, ক্লিংকার জাহাজ ১৮টি এবং ফুড গেইন ছিল তিনটি। এছাড়া কনটেইনার ইয়ার্ডে মোট কনটেইনার ছিল ৪৩ হাজার ৫৬১টি।

বন্দরের কর্মকর্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ আনা-নেওয়ার কাজটি করা হয় জোয়ারের সময়। আম্পানের প্রভাব কমে যাওয়ায় সকাল ১১টায় অর্থাৎ জোয়ারের সময় ছয়টি কনটেইনারবাহী ও দুটি জেনারেল কার্গোবাহী জাহাজ জেটিতে নিয়ে আসেন বন্দরের পাইলটরা। একই সময়ে ইয়ার্ড ও জেটিতে কনটেইনার ডেলিভারিসহ স্বাভাবিক অপারেশন সচল হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) জাফর আলম বলেন, নিথর বন্দর চালু হলো আবার। ঘূর্ণিঝড় আম্পান চট্টগ্রামকে পাশ কাটিয়ে চলে গেছে। মহাবিপদ সংকেত ৯ নামিয়ে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বন্দরে শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। বহির্নোঙর থেকে বন্দরে ফিরে আসতে শুরু করেছে জাহাজ। আটটি জাহাজ এরই মধ্যে চলে এসেছে। জোয়ার-ভাটানির্ভর বন্দর হওয়ায় অবশিষ্ট জাহাজ পরবর্তী জোয়ারে বন্দরে প্রবেশ করবে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি ও রপ্তানির ৯২ শতাংশ বাণিজ্যিক কার্যক্রম হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরে গত জানুয়ারিতে বাল্ক ক্যারিয়ার ও কনটেইনার জাহাজ থেকে এক কোটি আট লাখ ৯৬ হাজার ৪৬৮ টন, ফেব্রুয়ারিতে ৯৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৭৯ টন এবং মার্চে এক কোটি দুই লাখ ৬৪ হাজার ৪০২ টন কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে জানুয়ারিতে কনটেইনার ও পণ্যবাহী জাহাজ আসে ৩৫৭টি, ফেব্রুয়ারিতে আসে ৩৬৪টি এবং মার্চ মাসে আসে ৩৬৬টি।