নিজস্ব প্রতিবেদক: অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধ মদ, সিগারেট, টেলিভিশন আমদানি। এছাড়া আমদানির আড়ালে ৫২৫ কোটি টাকা পাচারের মূলহোতা সুরুজ মিয়া ওরফে মো. বিল্লাল হোসেন খানকে গ্রেফতার করেছে কাস্টমস, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। গতকাল রাজধানীর কাকরাইল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি অর্থপাচারের অভিযোগে দায়ের করা ১৪টি মামলার প্রধান আসামী। গতকাল কাস্টমস, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ এই তথ্য জানিয়েছেন।
ড. মো. আব্দুর রউফ জানান, আমদানি করা পণ্যের আমদানিকারক সুরুজ মিয়া ওরফে মো. বিল্লাল হোসেন খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যিনি এ দপ্তর থেকে দায়ের করা ১৪টি মানিলন্ডারিং মামলার আসামি, যাতে ৫২৫ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মেশিনারিজ ঘোষণায় অবৈধ মদ, সিগারেট ও টেলিভিশন আমদানির মূলহোতা এই সুরুজ মিয়া। আমাদের প্রত্যাশা ছিলো সুরুজ মিয়াকে গ্রেফতার করতে পারলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। অনেক চেষ্টার পর আজ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে একইভাবে অবৈধভাবে আমদানি করা পণ্য চালানের বিপরীতে দায়ের করা আরো ১৬টি মামলার বিষয়ে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান তিনি।

মহাপরিচালক বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে ১২টি কন্টেইনারে পোল্ট্রি ফিডের ক্যাপিটাল মেশিনারি ঘোষণায় অবৈধ মদ, সিগারেট ও টেলিভিশন খালাস নেওয়া হবে। পরে কন্টেইনারগুলো কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আটক করেন। ২০১৭ সালের ৫ ও ৬ মার্চ বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে কন্টেইনারগুলো ইনভেন্ট্রি করা হয়। কন্টেইনারে মেশিনারিজের পরিবর্তে বিপুল পরিমাণ সিগারেট, এলইডি টেলিভিশন, ফটোকপিয়ার মেশিন ও অবৈধ মদ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় হেনান আনহুই এগ্রো এলসি ও এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি নামের দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানিলন্ডারিং আইনে পল্টন থানায় একই বছরের ২৭ নভেম্বর মামলা করে কাস্টমস গোয়েন্দা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, দুইটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এর আগে ৭৮টি কন্টেইনারে মেশিনারিজ ঘোষণায় পণ্য খালাস নিয়েছে। এই ঘটনায় ৮৭৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের অভিযোগে পল্টন থানায় মোট ১৫টি মামলা করা হয়। দেখা গেছে, চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান যমরাজ ইন্ডাস্ট্রিজ হতে বাংলাদেশে আরো কিছু প্রতিষ্ঠান একইভাবে একই পণ্য আমদানি করেছে। দেখা যায়, এই ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে রাজধানীর খিলগাঁও শেখেরটেক এর হিব্রো ব্রাঞ্চো সাতটি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ৩১টি কন্টেইনারে মেশিনারিজ ঘোষণায় পণ্য আমদানি করেছে। যদিও হিব্রো ব্রাঞ্চো নামে কোন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই এবং এটি কখনোই উৎপাদন কার্যক্রম করেনি।

তিনি আরো জানান, হেনান আনহুই এগ্রো এলসি ও এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি নামের দুইটি প্রতিষ্ঠান এর আগে যেসব পণ্য আমদানি করেছে, তাতে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে। সুরুজ মিয়া হিব্রো ব্রাঞ্চো এর স্বত্ত্বাধিকারী। সাতটি চালানে ৩১টি কন্টেইনারে প্রায় ২৯১ কোটি টাকা পাচার করায় সুরুজ মিয়াকে এক নম্বর আসামি করে এর আগে মানিলন্ডারিং আইনে পৃথক সাতটি মামলা করা হয়েছে।
মহাপরিচালক জানান, ফতুলা নারায়ণগঞ্জের একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান চায়না বিডিএল। প্রতিষ্ঠানটি মেশিনারিজ ঘোষণায় সাতটি চালানের মাধ্যমে ২৫টি কন্টেইনারে আমদানি নিষিদ্ধ ও আমদানি নিয়ন্ত্রিত পণ্য আমদানি করেছে। এসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস নেওয়া হয়েছে। হেনান আনহুই ও এগ্রো বিডির সঙ্গে চায়না বিডিএল এর চলতি হিসাবের যোগাযোগ রয়েছে। এই অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের মালিকও সুরুজ মিয়া। ফলে চায়না বিডিএল একইভাবে মেশিনারিজের আড়ালে মদ, সিগারেট ও টেলিভিশন আমদানি করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। ফলে চায়না বিডিএল এর ২৩৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে স্বত্ত্বাধিকারী সুরুজ মিয়াকে এক নম্বর আসামি করে মানিলন্ডারিং আইনে পৃথক সাতটি মামলা করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনটি প্রতিষ্ঠানের মোট এলসি ও বিল অব এন্ট্রির সংখ্যা ৩১টি। আর আমদানি করা কন্টেইনার সংখ্যা ১৩৪টি। মোট পাচারের পরিমাণ এক হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা, যার বিপরীতে দায়ের করা মানিলন্ডারিং আইনে মামলার সংখ্যা ৩০টি।
###