নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের নামি কোম্পানি ব্র্যান্ডের আড়ালে তৈরি হচ্ছে নিম্নমানের পণ্য। বিভিন্ন প্যারামিটারে এসব পণ্য নিম্নমানের বলে প্রমাণিত হয়েছে। সঠিক উপাদান না থাকা ৫২টি ব্র্যান্ডের পণ্য নিম্নমানের হিসেবে চিহ্নিত করেছে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এসব পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করেছে বিএসটিআই।
গতকাল শিল্প মন্ত্রণালয়ে ‘পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই গৃহীত কার্যক্রম’-শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিএসটিআই এ তুলে ধরে। সম্প্রতি বিএসটিআই ল্যাবরেটরিতে এসব পণ্যের পরীক্ষা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত দুই মাসে ইফতার ও সাহরির জন্য ব্যবহৃত ২৭ ধরনের খাদ্য পণ্যের ৪০৬টি নমুনা সার্ভিল্যান্স টিমের মাধ্যমে বাজার থেকে সংগ্রহ করে বিএসটিআই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। ৪০৬টি নমুনার মধ্যে ৩১৩টির ফল পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৫২টি নিম্নমানেরর পণ্য। এর মধ্যে দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। আগামীতে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়।
নিম্নমানের পণ্যের মধ্যে রয়েছে সিটি গ্রুপের সিটি অয়েল মিলের তীর ব্র্যান্ডের সরষের তেল, টিকে গ্রুপের শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পুষ্টি ব্র্যান্ডের সরষের তেল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সরষের তেল, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের প্রাণ লাচ্ছা সেমাই, প্রাণ হলুদগুঁড়ো ও প্রাণ কারী পাউডার, বহুজাতিক কোম্পানি নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্ট বিডি লিমিটেডের ডুডল নুডলস, মেঘনা গ্রুপের তানভীর ফুড লিমিটেডের ফ্রেশ হলুদগুঁড়ো, পারটেক্স গ্রুপের ড্যানিশ ফুড লিমিটেডের ড্যানিশ হলুদগুঁড়ো ও কারী পাউডার, এসিআই ফুড লিমিটেডের এসিআই পিওর ধনিয়া গুঁড়ো ও এসিআই আয়োডিনযুক্ত লবণ, মিষ্টিমেলা ফুড লিমিটেডের মিষ্টিমেলা লাচ্ছা সেমাই, মধুবন ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ইন্ডাস্ট্রি প্রাইভেট লিমিটেডের মধুবন লাচ্ছা সেমাই, মিঠাই সুইটস অ্যান্ড বেকারির মিঠাই লাচ্ছা সেমাই, ওয়েল ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির ওয়েল ফুড লাচ্ছা সেমাই, মোল্লা সল্ট, কাশেম ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের সান চিপস।
কয়েকটি কোম্পানির নিম্নমানের বোতলজাত পানিও রয়েছে। এগুলো হলো আরা, আল সাফি, মিজান, মর্ন ভিউ, ডানকান, আর আর ডিউ, দিঘি ড্রিংকিং ওয়াটার। এছাড়া টেস্টি, তানি, তাসকিয়া, প্রিয়া সফট ড্রিংক পাউডার, কিং ময়দা, রূপসা দই, মক্কা চানাচুর, মেহেদী বিস্কুট, বনলতা ও বাঘাবাড়ী স্পেশাল ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচের গুঁডো, নিশিতা সুজি, মধুবন লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিল হলুদগুঁড়ো, সান হলুদগুঁড়ো, গ্রিনলেন মধু, কিরণ লাচ্ছা সেমাই, ডলফিন মরিচ ও হলুদগুঁড়ো, সূর্য মরিচের গুঁড়ো, জেদ্দা লাচ্ছা সেমাই, অমৃত লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপার, তিন তীর, মদিনা, স্টারশিপ, তাজ ও নূর স্পেশাল আয়োডিনযুক্ত লবণ।
সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, রমজানে দেশব্যাপী ভেজালবিরোধী অভিযান জোরদার করবে বিএসটিআই। বছরজুড়ে বিএসটিআই দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং সার্ভিল্যান্স অভিযান পরিচালনা করে থাকে। রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষায় অসাধু ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাগণ যাতে ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্যপণ্য ও পানীয় প্রস্তুত এবং বিপণন হতে বিরত থাকে সে লক্ষ্যে বিশেষ অভিযান জোরদার করা হবে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরিতে বিএসটিআই ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে প্রতিদিন তিনটি, ঢাকা মহানগর ব্যতীত পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও জেলা শহরে প্রতিদিন কমপক্ষে দুটি, বিএসটিআই’র ১০টি আঞ্চলিক/বিভাগীয়/জেলা অফিসের মাধ্যমে প্রতিদিন একটি করে ১০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এছাড়া র্যাবের সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিদিন এক বা একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় বিএসটিআই প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ করবে। এর পাশাপাশি বিএসটিআই’র কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত সার্ভিল্যান্স টিমের পরিচালিত অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, রমজান এলেই কিছু ব্যবসায়ী মজুত কম বলে দাম বাড়িয়ে দেয়। ভেজালের প্রবণতাও বেড়ে যায় যারা অনৈতিকভাবে দাম বাড়াবে এবং খাদ্যে ভেজাল দেবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএসটিআই মহাপরিচালক মো. মুয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চয়তা বিধানে বিএসটিআই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। পবিত্র রমজান উপলক্ষে বিএসটিআই’র ভেজালবিরোধী অভিযান বৃদ্ধি করবে। এ অভিযান সফল করার জন্য তিনি গণমাধ্যমসহ সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
৫২ ব্র্যান্ডের খাদ্যপণ্য নিম্নমানের
