নিজস্ব প্রতিবেদক: টাকা নিয়ে পণ্য দেয়নি, টাকাও ফেরত দেয়নিÑএমন ৬ হাজার ৭২১টি লেনদেনের তালিকা তৈরি করেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম লিমিটেড ও তাদের পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ফস্টার করপোরেশন লিমিটেড। এসব লেনদেনের বিপরীতে ৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা জড়িত। এ অর্থ ফেরত দিতে চায় প্রতিষ্ঠান দুটি।
এ-সংক্রান্ত তালিকা গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কিউকম ও ফস্টার করপোরেশন। সঙ্গে পাঠিয়েছে এক পৃষ্ঠার আবেদনপত্র। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বরাবর আবেদনপত্রটি জমা দেয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ফস্টার পেমেন্ট গেটওয়ের কাছে আটকে থাকা কিউকমের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তারা গতকাল তালিকাটি পাঠায় বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছে। ওই বৈঠকে আইন মন্ত্রণালয়, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ ব্যাংক, কিউকম ও ফস্টারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনপত্রে বলা হয়, যেসব ক্রয় আদেশের বিপরীতে কিউকম গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ করেনি অথচ গ্রাহকের পরিশোধিত টাকা ফস্টারের কাছে আটকে আছে, সেসব ক্রয় আদেশের আংশিক তালিকা দেয়া হয়েছে এ দফায়। সময় পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে উভয় প্রতিষ্ঠান মিলে আবার তালিকা তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
জানা গেছে, ফস্টারের কাছে কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা আটকে আছে, এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক টাকার বিপরীতে গ্রাহকদের কাছে পণ্য সরবরাহ করা হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছিল, গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেয়ার উপায় বের হবে, যদি কোনো আইনি জটিলতা না থাকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, আপাতত গ্রাহকদের ৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব। এ ব্যাপারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যক্রম হাতে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান দুটিকে সময় দেয়া হয়েছে আগামী রোববার পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যাত্রা শুরু করে কিউকমডটকম। ইভ্যালির মতো তারাও বিশাল ছাড়ে বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করে আসছিল। কিউকম ‘বিজয় আওয়ার’, ‘স্বাধীনতা আওয়ার’, ‘বিগ বিলিয়ন’ নামে বিভিন্ন অফারে কম দামে মোটরসাইকেল বিক্রির বিজ্ঞাপন দিত। অগ্রিম টাকা নিয়ে ২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে গ্রাহককে পণ্য বুঝিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিত প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি অনুযায়ী, তাদের নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ছয় লক্ষাধিক। ফস্টার আটকে রাখায় গ্রাহকদের ৪২০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারছে না বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অভিযোগ দিয়েছিল কিউকম।
ফস্টারের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, এটি এসএসডি টেক নামের একটি কোম্পানির পেমেন্ট সার্ভিস উইং। বাংলাদেশের পাশাপাশি মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও সিঙ্গাপুরেও তারা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সেবা দেয়। রাজধানীর গুলশানে উদয় টাওয়ারে তাদের কার্যালয়।
প্রতারণার অভিযোগে গ্রাহকের করা মামলায় গত অক্টোবর মাসে কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিপন মিয়া ও প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ওরফে আরজে নীরবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।