৫ জেলায় ২৭ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক বন্ধ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশের পর হবিগঞ্জ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে ২৭টি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ সময় জরিমানা ও সতর্কও করা হয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জে ৯টি, মাগুরায় সাতটি, টাঙ্গাইলে চারটি, চট্টগ্রামে চারটি, চুয়াডাঙ্গায় তিনটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয় বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, যেসব ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্স নেই, তিন দিনের মধ্যে সেগুলো বন্ধ করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। লাইসেন্স না থাকলে তো কেউ কাজ করতে পারবে না। তারা যেন দ্রæত লাইসেন্স করে নেয়, সে জন্যই এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপরই গতকাল অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রশাসন।

আমাদের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলায় বৈধ কাগজপত্র না থাকায় পাঁচটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এ ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানান হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন মো. নূরুল হক।

মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মঈনুল ইসলামের নেতৃত্বে পৌর শহরের সেবা ডায়াগনস্টিক, অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক, হক ডায়াগনস্টিক, প্রাইম ডায়াগনস্টিক ও তিতাস শিশু জেনারেল হাসপাতাল সাময়িকভাবে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ছাড়া চুনারুঘাটের পিপলস হাসপাতাল, এন কে হাসপাতাল, সূর্যের আলো ক্লিনিক ও গ্রিন লাইন ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাধবপুরের সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. আলাউদ্দিন, মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইশতিয়াক আল মামুন।

এদিকে মাগুরা জেলা সিভিল সার্জন শহীদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে সারাদেশের মতো মাগুরায় অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা তৈরি করে অভিযান চালানো হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বা বৈধ কাগজপত্র নেই সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

গতকাল অবৈধ ও অনিবন্ধিত সাতটি প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সেগুলো হলোÑশহরের ভায়না এলাকার রোকেয়া প্রাইভেট হাসপাতাল, একতা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম, নিরাময় প্রাইভেট হাসপাতাল, রিফাত ফার্মেসি, শাহানা মেডিকেল সার্ভিসেস, অরো ডেন্টাল কেয়ার, সুখী নীলগঞ্জ প্রজেক্ট।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমানের নেতৃত্বে শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়। এ সময় যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি তাদের সিলগালা ও জরিমানা করা হয়।

আওলিয়ার বলেন, জেলা শহরের হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত ২৫টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় সেন্ট্রাল মেডিকেল সেন্টার, সনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চুয়াডাঙ্গা আলট্রাসনোগ্রাফি সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ছাড়া হালনাগাদ করা কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ইসলামি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও তিসা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সতর্ক করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, অভিযান শুরু হওয়ার পর কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজন তাদের প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে কেটে পড়েন। ওইসব প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে সেগুলোও বন্ধ করে দেয়া হবে।

এদিকে টাঙ্গাইলে গতকাল সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে চারটি অবৈধ ক্লিনিক সিলগালা ও তিনটি ক্লিনিকের মালিককে জরিমানা করা হয়েছে বলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রানুয়ারা খাতুন জানান।

সিলগালাকরা ক্লিনিকগুলো হলো স্বদেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পদ্মা ক্লিনিক, আমানত ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটাল ও ডিজিল্যাব। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেবা দেয়ার অভিযোগে দি সিটি ক্লিনিককে ২০ হাজার টাকা, কমফোর্ড হাসপাতালকে ৩০ হাজার টাকা এবং ডিজিল্যাব ক্লিনিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান রানুয়ারা।

এদিকে চট্টগ্রামের ৪টি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশব্যাপী অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক বন্ধের অভিযানের অংশ হিসেবে নগরের চট্টশ্বেরী রোডের চট্টগ্রাম কসমোপলিটন হাসপাতালের লাইসেন্সসহ কোনো কাগজপত্র থাকায় হাসপাতালটির সেবা সাময়িক বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে তা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নগরের দামপাড়া এলাকার নিরুপণী প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে পরিবেশ ছাড়পত্র, ভ্যাট, টিন সার্টিফিকেট না থাকা, ল্যাবে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থাকায় প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। 

অন্যদিকে, বøাড কালেকশনে কোনো পাস করা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকা, মানসম্মত নয়। প্যাথলিজ কক্ষ এবং লাইসেন্স, ভ্যাট-ট্যাক্সের কাগজপত্র না থাকায় ডাবলমুরিং এলাকার ডিউটি রোডের পপুলার মেডিকেল সেন্টার সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। তাছাড়া হাসপাতালে দালাল চক্রের আনাগোনা, দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে না থাকা ও হাসপাতালের কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারায় পাঁচলাইশের সিএসটিসি হাসপাতালরে সেবা সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দশনা দেয়া হয়। এছাড়া আরও দুই প্রতিষ্ঠান ট্রিটমেন্ট হাসপাতাল ও পলি হাসপিটালকে সতর্ক করা হয় এবং সেবাপ্রত্যাশীদের সুবিধার্থে সেবার মূল্য প্রদর্শন না করার নির্দেশনা নেয়া হয়। 

সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠানের ত্রুটি থাকায় তাদের সেবা সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দশনা দেয়া হয়। এছাড়া আরও ২টি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০