Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 12:37 am

৫ পেট্রলপাম্পকে বিএসটিআই’র জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিমাপে কারচুপি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ আন্ডারগ্রাউন্ড স্টোরেজ ট্যাংকি ব্যবহার করায় পাঁচটি পেট্রলপাম্পকে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরীর উত্তরা এলাকায় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) মোবাইল কোর্ট এ ব্যবস্থা নেয়। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজোয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদের নেতৃত্বে বিএসটিআই’র ঢাকা বিভাগীয় মেট্রোলজি ইন্সপেক্টরেটের কর্মকর্তারা এ মোবাইল কোর্টে অংশ নেন। সূত্রমতে, দি স্ট্যান্ডার্ডস অব ওয়েটস অ্যান্ড মেজার্স অর্ডিন্যান্স-১৯৮২ (অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট-২০০১)-এর আওতায় এ অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে শাস্তি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ মডেল সার্ভিস, উত্তরা আজমপুরের কসমো ফিলিং স্টেশন, আবদুল্লাপুর মোড়ের আরএসআর ফিলিং স্টেশন, উত্তরা ফিলিং স্টেশন ও মেসার্স তাসিন ফিলিং স্টেশন। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরিমাপে কম দেওয়া ও মেয়াদোত্তীর্ণ আন্ডারগ্রাউন্ড স্টোরেজ ট্যাংকি ব্যবহার করার তথ্য পাওয়া যায়। দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের মাধ্যমে এ অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়।এর জন্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সিকিউরিটির। ফলে ব্যাংকের হাতে জমে যায় স্বল্প সুদহারের কাগজ, অন্যদিকে উদ্যোক্তারা পান বাড়তি নগদ অর্থ। আর এ দুই পক্ষেরই বন্ডের সুদহার থেকে লাভবান হওয়া দরকার ছিল।

এমন পরিস্থিতিতে আবির্ভাব ঘটে পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট স্কিমের। এর মূলমন্ত্র হচ্ছে, এন্টারপ্রাইজ ও প্রাইভেট সেক্টর কোম্পানিগুলো তাদের অতিরিক্ত তরল অর্থ ব্যাংককে ঋণ হিসেবে দেবে, যা আমানত হিসেবে গণ্য হবে না। বরং বিনিয়োগের মর্যাদা পাবে। এ ব্যবস্থায় প্রদত্ত অর্থ ফেরতের কোনো নিশ্চয়তা থাকবে না। ফলে ঝুঁকি বর্তাবে এন্টারপ্রাইজের ওপর, ব্যাংকের ওপর নয়। লেনদেনের এ নতুন ধারার কারণে ব্যাংকার ও দালালদের মধ্যে একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এছাড়া ব্যাংকারদের শেয়ারবাজারে উচ্চ ঝুঁকির বিনিয়োগের অনুমতি ছিল না। তাই শেয়ার মার্কেটে লেনদেনের উদ্দেশ্যে নতুন এক উপায় বের করল তারা। ব্যাংকাররা দালালদের নামে ব্যাংকার্স রিসিপ্ট প্রদান করা শুরু করল। আর দালালরাও কোনো প্রকৃত সিকিউরিটি দাখিল করা ছাড়াই এর মালিকানা পেয়ে গেল। এ ব্যবস্থাকেই বলা হতো ‘রেপো সিস্টেম’।

ধীরুভাই ১৯৮০’র দশকের শেষের দিকে অর্থবাজারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৮৬-৮৭ সালে হারানো রিলায়ান্স শেয়ারের মূল্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। ধীরুভাই তার তহবিল সংগ্রহের কর্মকাণ্ডকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে গেলেন যে অনেকে একে একধরনের ভার্চুয়াল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর গুরুত্ব অনেকটা তার পলিয়েস্টার ব্যবসায়ের সমান হয়ে উঠল।

১৯৯২ সালের রেপো বুমের সময় সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিল মেহতাদের। হরষাদ মেহতা ও তার ভাইয়েরা ১৯৮৬ সালে শেয়ারবাজারে রিলায়ান্সের শেয়ার-মূল্যের অবমূল্যায়নের অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন। এ স্কিমের কৌশল ফেঁদেছিলেন আম্বানির তৃতীয় ছেলে বলে খ্যাত আনন্দ জাইন। যাহোক, মেহতাদের এক ভাই ক্রেডিট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার ভাইস চেয়ারম্যানের মেয়েকে বিয়ে করেন। এ পারিবারিক সম্পর্ককে ব্যবসায়ের স্বার্থে সফলভাবেই ব্যবহার করেছিলেন তারা। হরষাদ মেহতার ভাইয়ের শ্বশুর আবার রিলায়ান্সের একজন বড় ঋণদাতা। ফলে মেহতারা এ সংকট থেকে অল্পেই বেঁচে যান। এর পর থেকে রিলায়ান্সকে এড়িয়ে চলা শুরু করেন তারা। মনোনিবেশ করে অর্থবাজারে। ১৯৯০ সালে মেহতারা আবার শেয়ারবাজারে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯১ সালের মধ্যে আবার তারা নিজেদের নাম নতুন করে পরিচিত করে ফেলেন। তাদের এ পুনরাগমন খুবই সাড়া জাগায়। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে শুধু তাদের একক আগ্রহই শেয়ারবাজারের সূচককে ঊর্ধ্বগতি দিতে যথেষ্ট।

১৯৯১ সালের নভেম্বর মাসে মেহতাদের পক্ষ থেকে আম্বানিদের কাছে একটি ফোন করা হয়। তাদের এ সাক্ষাতে ১৯৮৬ সালের ঘটনা উঠে আসে বটে। কিন্তু অতীতকে ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে চান তারা। তাদের সম্পর্কের ব্যাপক উন্নতি হতে থাকে। দেখা-সাক্ষাতের মাত্রাও বাড়তে থাকে। রিলায়ান্সের তখন এর শেয়ারমূল্য বাড়ানোর খুব দরকার ছিল। দীর্ঘকাল ধরেই ১৩০ থেকে ১৭০ রুপির মধ্যেই ঘোরাফেরা করছিল রিলায়ান্স শেয়ারদর। নিমেষ শাহের মতো ঝানু স্টকব্রোকারকে কাজে লাগিয়েও এ অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। রিলায়ান্সের তখন লক্ষ্য হলো, ভারতের প্রথম কোম্পানি হিসেবে ইউরো-ইস্যুর অধিকারী হওয়া এবং উচ্চ মূল্যে সেই শেয়ার বাজারে বিক্রি করা।

মেহতারা দেখলেন যে এখনও অনেকেই এটাই বিশ্বাস করে যে রিলায়ান্স নিজের শেয়ার নিজেই বিক্রি করে থাকে। তারা রিলায়ান্সের শেয়ার নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু শর্ত ছিল নিজের শেয়ার নিজে বিক্রি করতে পারবে না রিলায়ান্স। রিলায়ান্স শর্তে রাজি হলো। মেহতারাও শুরু করলেন কাজ। ফলে ১৯৯২ সালের শুরুতে যে শেয়ারের মূল্য ছিল মাত্র ১২৭ রুপি, তার মূল্য ফেব্রুয়ারির শেষে গিয়ে হলো ২৪১ রুপি, আর মার্চের শেষে হলো ৪৫৫ রুপি। পাশাপাশি সেনসেক্স সূচকের মান যা ১৯৯১ ডিসেম্বরের শেষে ছিল মাত্র ১৯১৫, তা ২২ এপ্রিল গিয়ে দাঁড়াল ৪৪৬৭-তে। ফলে রিলায়ান্সের শেয়ারের ঊর্ধ্বগতি মেহতারাই যে অন্যতম প্রভাবক হয়ে কাজ করেছেনÑতা অনুমান করতে স্বাভাবিকভাবেই কারও কোনো কষ্ট হয়নি।

এ ঘটনার পর হরষাদ মেহতা শেয়ারবাজারের সেলিব্রিটি বনে গেলেন। তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য রিপোর্টারদের ভিড় পড়ে গেল। সবাই জানতে চায়Ñকী এমন কৌশল খাটিয়েছেন তিনি। এ স্কিমের ফলে মেহতাদের হাতে যে বিপুল অর্থ এসেছিল, তা নিয়ে কেউ কোনো বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবই প্রকাশ করেনি। ভারতের সবচেয়ে বড় করদাতা হিসেবে পুরস্কৃৃতও করা হলো তাকে। উপাধি দেওয়া হলোÑদ্য বিগ বুল। অনেকে আবার মেহতাকে ডাকলেন ‘দ্বিতীয় আম্বানি’ বলে।

এতে হয়তো একটু রুষ্টই হয়েছিল আম্বানি পরিবার। রিলায়ান্সের শেয়ার নিয়ে কাজ করে একজন সামান্য দালাল এত বাহবা পাচ্ছেÑএটা তাদের ভালো লাগেনি। এছাড়া মেহতার কৌশল যে আম্বানির পন্থার চেয়ে বেশি ফলপ্রসূ হয়ে গেল, তাও মানতে পারেননি তারা। রিলায়ান্স পেট্রোকেমিক্যাল ও লার্সেন অ্যান্ড টুবরো নিয়ে রিলায়ান্স তখন চাপে ছিল। এ দুই কোম্পানির যে ডিবেঞ্চারগুলো বিক্রি করছিল রিলায়ান্স, সেগুলোই কিনে নিচ্ছিলেন মেহতা। বিশেষত রিলায়ান্স পেট্রোকেমিক্যালের ডিবেঞ্চার কিনে খুব লাভ করেছে তারা। রূপান্তরের পর অল্প দরে শেয়ার পাওয়া গেছে। এছাড়া ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরেও ট্রিপল ডিবেঞ্চার ইস্যুর সময়ও অনেক পরিমাণে কিনেছেন মেহতারা। ফলে তাদের হাতে জমা পড়েছে রিলায়ান্স শেয়ারের উল্লেখযোগ্য অংশ। এরপর এ শেয়ার নিয়ে নিজেদের মতো করে ব্যবসা করতে লাগলেন মেহতা। অর্থাৎ রিলায়ান্সের শেয়ার দিয়ে নিজেদের কৌশলের গুণে রিলায়ান্সের চেয়েও বেশি লাভজনক ব্যবসা করছিলেন মেহতারা।