শেয়ার বিজ ডেস্ক: মেহেরপুরে খুন ও গুমের গুজবের ৫ বছর পর রকিবুজ্জামান রিপন (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুষ্টিয়ার একটি দল গত রোববার গাজীপুর থেকে তাকে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া রিপন মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের দত্তপাড়ার মনিরুল ইসলামের ছেলে। ২০১৭ সালে গাংনী উপজেলার ভরাট গ্রামে শশুরবাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন সে।
আজ মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রিপনকে মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তারিক হাসানের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে বাবা মায়ের জিম্মায় দেন।
পিবিআই কুষ্টিয়ার পরিদর্শক মনিরুজ্জামান জানান, গাংনীর ভরাট গ্রামের আকবর হোসেনের মেয়ে শ্যামলী খাতুনকে বিয়ে করে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করছিলেন রকিবুজ্জামান রিপন। তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালের ৮ জুলাই নিরুদ্দেশ হন রিপন।
রিপনের কোনো খোঁজ খবর না পাওয়ায় তার বাবা মনিরুল ইসলাম ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর রিপনের স্ত্রী শ্যামলী খাতুন, শ্বশুর আকবর আলী, শাশুড়ি সুপিরন খাতুন ও চাচা শ্বশুর তোক্কের আলীকে আসামি করে আদালতে খুন ও লাশ গুমের মামলা করেন। তার কিছুদিন পর শ্বশুর আকবর আলী বিদেশে চলে যানে। এতে মনিরুল পরিবারের মাঝে আরও সন্দেহের দানা বাধে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্ত করে রিপনের কোনো হদিস পাননি। আদালত পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে পিবিআইকে পুনতদন্তের নির্দেশ দেন।
মনিরুজ্জামান আরও জানান, নিরুদ্দেশ হওয়ার পর রিপন নিজের মো. শরিফুল ইসলাম ছদ্মনাম ধারণ করে গাজীপুর শ্রীপুরে অবস্থান করেন। সেখানে ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডে টেকনিশিয়ান পদে চাকরি নেন। গত বছর মার্চ মাসে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার মনমথ কুঠিপাড়ার সিরাজুল ইসলামের মেয়ে শিমলা আক্তার (২০) কে জামালপুরের সরিষাবাড়ি একটি কাজি অফিসে বিয়ে করেন। বিয়েতে যে এনআইডি ব্যবহার করা হয়েছে তা ভুয়া বলে নিশ্চিত করেন নির্বাচন অফিস। শিমলার ঘরেও একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। যার বয়স মাত্র ৬ মাস। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে পিবিআই কুষ্টিয়ার পুলিশ তদন্ত শুরু করেন এবং সোর্স নিয়োগ করে খুঁজতে থাকেন রিপনকে। কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রিপনের পরিবার ও শশুর বাড়ির লোকজনকে। পরে রোববার ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলের সামনে থেকে তাকে আটক করে।
তিনি আরও বলেন, নিখোঁজ রাকিবুজ্জামান রিপনের ছবিসহ একটি বিজ্ঞপ্তি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে তিনি তার নিজের ফেসবুকে ‘এই ব্যক্তির সন্ধান চাই’ বলে একটি পোস্ট দেন। সেখান থেকে একটি সূত্র পাওয়া যায়। ওই সূত্র ধরে প্রথমে খুলনা ও পরে সিরাজগঞ্জে রাকিবের ছবি নিয়ে খোঁজ শুরু হয়। একপর্যায়ে রাকিবের মতো দেখতে এক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায় গাজীপুরের শ্রীপুরে। এনজিওর ঋণ দেওয়া ব্যক্তির পরিচয়ে তিনি রাকিবের সঙ্গে কথা বলেন। জানতে পারেন, একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি করছেন শরিফুল ইসলাম নামে। বাবার নাম দেওয়া আছে সিরাজুল ইসলাম। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি স্বীকার করেন, তার প্রকৃত নাম রাকিবুজ্জামান রিপন।
এদিকে একই ঘটনায় স্ত্রী শ্যামলী খাতুন শ্বশুর মনিরুল ইসলাম, শাশুড়ি সাহেদা খাতুন, মুনসাদ আলী ও সাজন আলীকে আসামি করে পাল্টা মামলা করেন। ওই মামলা এখনও বিচারাধীন।
রিপনের স্ত্রী শ্যামলী খাতুন বলেন, বিয়ের পর থেকেই রিপন তাকে নির্যাতন করতো। একাধিকবার যৌতুক দিলেও বার বার টাকার দাবি করতো। এর আগেও রিপন আরও একটি বিয়ে করেছিলো। আসলে রিপন একজন নারী লোভী। তার নাগরিক সনদপত্র না থাকায় একমাত্র সন্তানকে স্কুলে ভর্তিও করাতে পারেননি তিনি। উপর্যুপরি তাকে ও পরিবারকে বার বার আদালতে হাজির হতে হয়েছে। এতে চরম আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন পুরো পরিবার। এখন আদালতের কাছে ক্ষতিপূরণ চাই আমি।