নিজস্ব প্রতিবেদক: পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক না রাখার প্রস্তাব করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে আরেক ধাপ এগোতে হলে দরকার হবে সুশাসন। সুশাসন থাকলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বেড়ে যাবে। আর ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়লে, দেশের অর্থনীতি আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ সুশাসন নিশ্চিত করবে। এটা দুর্নীতি কমাবে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াবে।
বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক পূর্বের অবস্থা বহাল না করে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত শুল্কমুক্ত করা হোক। এতে মধ্য ও নি¤œবিত্তের মুখে হাসি অব্যাহত থাকবে।
ভ্যাট আইন প্রসঙ্গে জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, ভ্যাট নিয়ে ঢালাওভাবে যে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে আমি তার সঙ্গে একমত নই। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভ্যাট পদ্ধতি পছন্দ করি না। কারণ এটি ধনী আর গরিবকে এক পাল্লায় দেখানো হয়। এতে সবাইকে সমানভাবে কাটে, গরিবরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য ভ্যাট পদ্ধতি বাদ দিয়ে গুড্স অ্যান্ড সেল্স ট্যাক্স, আধুনিক বিশ্বে যেটা চলছে- জিএসপি পদ্ধতিতে রূপান্তর বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা ভ্যাট আইনের সমালোচনা করছেন, তাদের মনে রাখতে হবে, এখানে প্রধানমন্ত্রী কিন্তু অনেক ছাড় দিয়েছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় শত শত পণ্যে ভ্যাটমুক্ত করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর সমালোচনাকারীদের সমালোচনা করে ইনু বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ভ্যাট আইন, ব্যাংকে আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার- এ তিনটি বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা হচ্ছে। সবাই অর্থমন্ত্রীর দিকে তীর ছুড়ছেন। সবাই তকে দোষারোপ করছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তিনি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। আর যে তিনটি বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে, এ তিনটি বিষয় নিয়ে তো বাজেট নয়। এ বাজেটে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। সবাই আমরা ওই তিনটি বিষয় নিয়ে হৈ চৈ করছি। বাজেটের অন্যান্য বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনাই করছি না।
তিনি আরও বলেন, এক মুখে বলবেন চমৎকার, সফল আর শক্তিশালী অর্থনীতি; আরেক মুখে বলবেন ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী, এটা যায় না। দেশের অর্থনীতি সফল, আমাদের অর্থমন্ত্রীও সফল। আর অর্থনীতি সফল হলে আমাদের প্রধানমন্ত্রীও যোগ্য ও সফল প্রধানমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুটি যুদ্ধ। এর একটি হচ্ছে রাজনৈতিক যুদ্ধ। এখানে জঙ্গি ও তার সঙ্গীকে ক্ষমতার বাইরে রাখা। আর অর্থনৈতিক যুদ্ধ হচ্ছে দেশের সমৃদ্ধ অর্জনের যুদ্ধ। সমৃদ্ধি অর্জনের যুদ্ধে জিততে বৈষম্য দূর করতে হবে।
ইনু সংবাদপত্রের ওপর প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি করে বলেন, সংবাদপত্র শিল্পের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট সঠিক হয়নি। গত কয়েক বছরে গণমাধ্যমের যে বিকাশ হয়েছে, এ ভ্যাট তাতে ধাক্কা দেবে। এ শিল্প হোঁচট খাবে। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, অর্থমন্ত্রীকে বলতে হবে সংবাদপত্র শিল্পের ওপর প্রস্তাবিত এ ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য।
বাজেটে অনেক দুর্বলতা রয়েছে মন্তব্য করে জাসদ একাংশের এ নেতা বলেন, ব্যাংকে লুটপাট অব্যাহত আছে। দুর্নীতির সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। আমরা যেখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছি, সেখানে দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে ভি-চিহ্ন দেখিয়ে বেরিয়ে আসে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
গত ১ জুন বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে ভ্যাটের পাশাপাশি ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক নিয়েই সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের সমালোচনা সইতে হয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে।
বেশিরভাগ এমপি-মন্ত্রীর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবির মধ্যে শুল্কের হারে পরিবর্তন আনার আভাস দেন মুহিত। এর মধ্যে ব্যাংক আমানতে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আবগারি শুল্ক মুক্ত করার দাবি জানালেন সরকারের শরিক জাসদ একাংশের নেতা ইনু।