৬টি এমআরটিতে ৫০ লাখের বেশি যাত্রী পরিবহন হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০৩০ সালের মধ্যে ১২৯ কিলোমিটারের ৬টি এমআরটি (মেট্রোরেল) লাইনের কাজ শেষ করা হবে। এই ৬টি লাইনের কাজ শেষ হলে মেট্রোরেলে প্রায় সাড়ে ৫০ লাখ যাত্রী পরিবহন করা যাবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এমআরটি লাইন-৬-এর অগ্রগতির প্রতিবেদন উপস্থাপনায় এসব তথ্য জানান তিনি।

ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি ৬-এর নির্মাণকাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৮০ দশমিক ১০ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৭৯ দশমিক ৪৭ ভাগ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৮১ দশমিক ১৫ ভাগ। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুসরণে মেট্রোরেলের মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করার জন্য ডিটেল নকশাসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই অংশের পরিষেবা যাচাইয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। সে পরিকল্পনা নিয়েই পুরোদমে প্রকল্পের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে একটা অংশ এ সময়ের মধ্যেই খুলে দিতে পারব।

রাজধানীতে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রকল্পের নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের।

বিশেষ অতিধির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, মেট্রোরেলের সুফল পেতে হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বয়ের বিকল্প নেই। মেট্রোরেল চালু হলে এর নিচের রাস্তা, ড্রেন, শাখা রোড, রাস্তার লাইট, পরিবেশÑএগুলো সবই সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

তিনি বলেন, ফুটপাত যথেষ্ট প্রশস্ত হতে হবে। তা না হলে সেখানে যাত্রীরা ব্যাগ বা জিনিসপত্র নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে না। ল্যান্ডিং স্টেশনে পাবলিক স্পেস খুব জরুরি। এগুলো নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে আর মাত্র ১০ দিন পরেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হবে, মাত্র ১৮০ দিন পরেই চালু হবে মেট্রোরেল ও ৬ হাজার ৯৩৫ দিন পরে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। আমাদের মনে রাখতে হবে মেট্রোরেলকেন্দ্রিক যে জীবন ব্যবস্থা ঘরে উঠবে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে। স্টেশনকেন্দ্রিক যে অর্থনৈতিক বলয় গড়ে উঠবে তার সঠিক পরিকল্পনা করে জনসাধারণের কাজে লাগাতে হবে।

ডিএনসিসি মেয়র আরও বলেন, জলবায়– পরিবর্তনের ফলে ঢাকা শহরে বিপুল সংখ্যক মানুষ চলে আসছে। যত বেশি কানেকশন আমরা করতে পারব ততই কিন্তু মানুষ ঢাকা শহরে কাজ সেরে আবার নিজেদের বাড়িতে চলে যাবে।

ঢাকায় নৌযান চলাচলে গুরুত্বারোপ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের চেচার বেসড সলিউশন (প্রাকৃতিক সমাধান) করতে হবে। ঢাকার চারপাশে নদী আছে, শহরের ভেতরে আছে খাল। এগুলোর মাধ্যমে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা করলে যানজট নিরসন হবে।

এমআরটি লাইন-১ বাস্তবায়ন সম্পর্কে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, এমআরটি লাইন-৬-এর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এমআরটি লাইন-১ নির্মাণের পূর্বে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা জরুরি সেগুলো হলো: ফুটপাতে পথচারীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত কল্পে ফুটপাতের ওপরে কোনো অবস্থায় এমআরটি লাইনের ল্যান্ডিং নির্মাণ করা যাবে না, মেট্রোরেল লাইন নির্মাণকাজ চলাকালীন যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করতে হবে এবং ফুটপাতের প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে, মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করার আগেই ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা চালু করতে হবে, ইন্টিগ্রেটেড করিডোর ব্যবস্থাপনার (আইসিএম) সংস্থান রাখতে হবে, সব শাখা সেকেন্ডারি ও টারসিয়ারি সড়ক থেকে এমআরটি স্টেশনের একটি কার্যকরি সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে, আলোচ্য প্রকল্পের সঙ্গে শুরুতেই ট্রানজিট অরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্টের সংস্থান রাখতে হবে, এমআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলাকালীন সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করার নিমিত্তে প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলাকালীন সড়ক বাতিগুলো অবশ্যই সচল রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকাবাসীর জন্য এমআরটি প্রধানমন্ত্রীর উপহার। এই এমআরটি চালু হলে যানজট অনেকাংশেই কমে যাবে, তবে পুরোপুরি কমবে না। ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট করেই আমদের এই যানজট নিরসন করতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়নের সময়েই অংশীজনদের সমন্বয় হলে আরও বেশি সুফল পাওয়া যাবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, আশা করি মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকটা কমে যাবে, দেশবাসী এর সুফল ভোগ করবে। ঢাকায় ক্রমাগত জনসংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। ফলে ঢাকায় ব্যাপক যানজট হয়। ঢাকার দুই মেয়রকে যানজট নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০