আব্দুল কবীর ফারহান, নোবিপ্রবি: কভিডকালীন বন্ধ শেষে ৬২০ দিন পর আজ খুলছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। কভিড সংক্রমণ এড়াতে ১৪ দিনের ছুটি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও ভাইরাসের প্রকোপের ফলে এ ছুটি বেড়ে রূপ নেয় দেড় বছরের বেশি সময়ে।
আজ থেকে নোবিপ্রবিতে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে সশরীরে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
কভিড সংক্রমণ কমাতে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০২০ সালের ১৮ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১৪ দিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দেয় নোবিপ্রবি। সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধও বাড়তে থাকে। শিক্ষার্থীদের হতাশা কমাতে উপাচার্যদের ভার্চুয়াল সভায় গত বছর ২৬ জুন ইউজিসি অনলাইন পাঠদান চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। ৩০ জুন থেকে নোবিপ্রবিতে এ পদ্ধতিতে শ্রেণি কার্যক্রম চালু হলেও ১ অক্টোবরে তা বন্ধ হয়ে যায়। নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির ডাকে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে টানা ৭৬ দিন বন্ধ থাকে অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম। ৭৬ দিন পর কোনো ফল না পেয়ে উপাচার্য ও মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে ক্লাসে ফেরেন শিক্ষকরা।
এছাড়া চলতি বছর জানুয়ারির দিকে ক্যাম্পাসে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া শুরু করে নোবিপ্রবি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ সেমিস্টারে থাকা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হয় এবং পর্যায়ক্রমে ফাইনাল পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যাচের রুটিন দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আনা হয়। এর মধ্যে কিছু পরীক্ষা নেয়া হলেও গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সম্পন্ন না হতেই সব পরীক্ষা স্থগিত করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
পরবর্তী সময়ে ১ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে পরামর্শ করে সশরীরে ও অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারবে। এরপর গত ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় জুলাই থেকে স্নাতক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে ১২ জুলাই থেকে নোবিপ্রবির অনলাইন পরীক্ষা শুরু হয় এবং সব বিভাগের এক সেমিস্টার পরীক্ষা নেয়া হয়।
ক্যাম্পাস না খুলে অনলাইনে সম্পন্ন করা হয় সম্পূর্ণ এক সেমিস্টারের সব ধরনের ক্লাস পরীক্ষা। শিক্ষার্থী শূন্য থাকায় দীর্ঘদিন নির্জীব থাকে ক্যাম্পাস। দেশে করোনার প্রকোপ কমে আসলে সরকারের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে নোবিপ্রবি প্রশাসন অক্টোবরের ৩১ তারিখ হল খুলে দেয় এবং সর্বশেষ একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ২৮ নভেম্বর থেকে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়।
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরার নির্দেশনা দিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিদার-উল-আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলে ক্যাম্পাসের প্রাণ ফিরবে। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা ফিরে আসছে, এটি আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। তবে কভিডের প্রকোপ কমলেও কভিড একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, এজন্য শিক্ষার্থীদের সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে।