ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে

৬২৫২ কোটি টাকার ব্যয় বেড়ে ১১০৪৪ কোটিতে

ইসমাইল আলী: ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হয় ২০২০ সালের ১২ মার্চ। এটি নির্মাণে দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যার একটি এখনও চলমান। উদ্বোধনের ১৯ মাস পেরুলেও শেষ হয়নি এর বিভিন্ন অংশের নির্মাণকাজ। এরই মধ্যে প্রকল্পটিতে নতুন আরও কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে। এজন্য প্রকল্পটি সংশোধন করতে হবে। এতে চতুর্থ দফা বাড়তে যাচ্ছে প্রকল্পটির নির্মাণব্যয়।

তথ্যমতে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রথম প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তবে ছয় মাস পরই তা ৬০০ কোটি টাকা বেড়ে যায়। সে সময় প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে তা আরেক দফা বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮৯২ কোটি পাঁচ লাখ টাকায়।

এর পরও প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি থেকে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির বাকি কাজ শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নেয়া হয় দ্বিতীয় প্রকল্প, যা অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত। সেটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় চার হাজার ১১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এরই মধ্যে প্রকল্পটিতে আরও কিছু বিষয় নতুনভাবে যুক্ত হয়। তবে করোনার মাঝে ব্যয় সাশ্রয়ের যুক্তিতে কিছু আইটেম কাঁটছাঁট করা হয়। বাকি কাজ যুক্ত হওয়ায় প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়ায় চার হাজার ১৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

দুই প্রকল্প মিলিয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১১ হাজার ৪৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ২০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।

সূত্র জানায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আগে প্রকল্পটির পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে। এতে জানানো হয়, প্রকল্পটিতে বেশকিছু কাজ নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে, যা ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এজন্য ডিপিপি সংশোধন করা প্রয়োজন।

নতুন সংযোজিত অংশগুলো হলোÑমাওয়া রাউন্ড অ্যাবাউট পুনঃডিজাইন ও নির্মাণ, পাঁচ্চর রাউন্ড অ্যাবাউট পুনঃডিজাইন ও নির্মাণ, নতুনভাবে সংযোজিত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, ভাঙ্গায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর অফিস ও ট্রেনিং সেন্টার কাম ল্যাবরেটরি নির্মাণ, বিদ্যমান ব্রিজগুলোর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং এক্সপ্রেসওয়ের জন্য আলাদাভাবে গ্যাস স্টেশনের ব্যবস্থাকরণ।

বৈঠকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের ফলে বর্তমান চলমান কাজে স্থবিরতা, ঠিকাদারদের নির্মাণকাজের বকেয়া বিল পরিশোধে বিলম্ব, সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনে সময়ক্ষেপণ, শুভাড্যা ব্রিজের নকশা অনুমোদনে জটিলতা, রেললিংক প্রকল্প কর্তৃক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় বিলম্ব, প্রকল্পের সড়কের রিটেইনিং ওয়ালের (ধারণকারী প্রাচীর) নিচে ওয়াসার পানির লাইন মেরামত এবং অবকাঠামো অনুযায়ী প্রকল্প হস্তান্তর প্রক্রিয়া।

বৈঠকে জানানো হয়, সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন সময়সাপেক্ষ। তাই দুটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর একটি হলো, বর্তমান সংশোধিত ডিপিপির কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে আলাদাভাবে নতুন ডিপিপি প্রণয়নপূর্বক নির্মাণ করা। অপর প্রস্তাবটি হলো সংশোধিত ডিপিপিতে উল্লেখিত আইটেমগুলোর নকশা ও ব্যয় প্রাক্কলন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তুতপূর্বক নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা।

এ বিষয়ে জানতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সড়ক পরিবহন বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পটিতে নতুন সংযোজিত অংশগুলো বাস্তবায়ন কতটুকু জরুরি ও বিদ্যমান প্রকল্পের আওতায় তা কতটুকু করা যায় এরই মধ্যে খতিয়ে দেখা হয়েছে। এর ভিত্তিতে যে অংশগুলো একেবারেই বাস্তবায়ন না করলে নয়, সেগুলো রেখে বাকিগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। মূলত দ্রুত প্রকল্পটি শেষ করা ও ব্যয় সীমিত রাখার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রকল্পটির ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০