নিজস্ব প্রতিবেদক: ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের দায়ে ২৯০ জনকে চিহ্নিত করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল দুপুরে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ এ তথ্য জানান।
জুনের মধ্যে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে মাশুল ছাড়া বিল দেওয়ায় ছাড় দেওয়া হয়েছিল, তা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। তবে সেটি শুধুই আবাসিকের ক্ষেত্রে দেওয়া হতে পারে বলে সচিব জানান।
বিদ্যুৎ বিভাগের টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন নিয়ে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সব মিলিয়ে ৬২ হাজার ৯৬ বিলে অসঙ্গতি পেয়েছে তারা। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) দুই কোটি ৯০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬১১ জনের অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯ জন গ্রাহকের মধ্যে ১৫ হাজার ২৬৬ জন, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ১০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৫ হাজার ৬৫৭ জন, নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ১৫ লাখ ৪৮ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ২ হাজার ৫২৪ জন, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ১২ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৫৫৬ জন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ জনের মধ্যে ২ হাজার ৫৮২ জন অতিরিক্ত বিলের শিকার হয়েছে।
অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের জন্য গ্রাহকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ড. সুলতান আহমেদ বলেন, ‘আমরা সব সময়ই গ্রাহকবান্ধব। আমরা যে আস্থা হারিয়েছি আশা করছি, তা শিগগিরই পুনরুদ্ধার করতে পারব। ভবিষ্যতে বিতরণ কোম্পানিগুলো এ ধরনের সংকট সমাধানে শতভাগ মিটার রিডিং নিয়ে বিল করবে।’
সচিব বলেন, ‘করোনার মধ্যে আমাদের মিটার রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং করতে পারেননি। এজন্য এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। করোনার মধ্যে ৬০১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এর মধ্যে ১২ জন বিদ্যুৎকর্মী মারা গেছেন।’
বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিষয়ে জানানো হয়, আরইবি মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে, তারা খুঁজে বের করছে কারা এজন্য দায়ী। চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করার কাজ চলছে। আরইবি তাদের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
ডিপিডিসি অতিরিক্ত বিলের অভিযোগে একজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত, ৩৬টি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে। এছাড়া আরও ১৩ জন মিটার রিডার এবং ডেটা অ্যান্ট্রি অপারেটরসহ মোট ১৪ জনকে চুক্তিভিত্তিক কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
নেসকো দুজন মিটার রিডারকে বরখাস্ত করেছে। একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করেছে। ওজোপাডিকো ২২৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে। সচিব বলেন, যাদেরই অতিরিক্ত বিল এসেছে তার সবগুলো সমন্বয় করে দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক একদিনের নয়। কাজেই কোনো গ্রাহক যদি এখনও মনে করে তার বিল বেশি এসেছে, তার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা তার বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে ব্যবস্থা নেব। যাদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে তাদের সবার বিষয়ে তদন্ত হবে। কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে চাকরি বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ধরনের ভুল যাতে না হয় সে জন্য শতভাগ মিটার দেখে বিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আমাদের কাছে ৪ হাজার ৩৩০টি বিলের অভিযোগ এসেছিল। কিন্তু আমরা নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখেছি, ১৫ হাজার গ্রাহকের অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে। তাদের সবার বিল সমন্বয় করা হয়েছে।’
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।