আমাদের বন্ধুত্ব সবার জন্য উম্মুক্ত, সেøাগান সামনে রেখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (২০১৫-১৬) সেশনের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদ্যাপিত হয়েছে ৬ ফেব্রুয়ারি। ক্যাম্পাসের ৬৩তম ব্যাচ এটি। অন্য ব্যাচ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এ ব্যাচটির নাম ‘তারুণ্য ৬৩’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ব্যাচগুলো আদর করে ডাকে ‘তারুণ্য’। ভর্তি হওয়ার পর থেকে এ ব্যাচটি যেন চাঁদের আলোর মতো ক্যাম্পাসের সব দ্যুতি কেড়ে নিয়েছে নিজেদের দিকে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ ক্যাম্পাসের সব সংগঠনের ভালোবাসায় সিক্ত এ ব্যাচটিই প্রথম একই বর্ষের সব বিভাগের শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে আনতে সক্ষম হয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারি তাদের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সব বিভাগের শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে অনুষ্ঠানের শুরু করে। ছিল ফ্লাশমবের মতো নজরকাড়া ড্যান্সও।
‘তারুণ্য ৬৩’র তারুণ্যকে আরও বেশি বেগবান করেছে বাংলাদেশের অন্যতম সংগীত ব্যান্ড ‘অ্যাসেজ’র আগমন। মন মাতানো গানে এক মায়াবী রাতের স্মৃতি দিয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের মনে। শীতের শেষে ক্যাম্পাসে প্রাণের সঞ্চারে পথিক হয়েছিল ‘তারুণ্য ৬৩’র অনুষ্ঠান। এ যেন বসন্ত আসার সঙ্গেই কোকিলের গান, বসন্ত বরণের প্রাথমিক পদক্ষেপ।
তারুণ্যের উদ্যমতা, চাঞ্চল্য, কয়েকটি মতের একটি মত, ঐক্যের বন্ধন যেন দুরন্ত গতিতে সামনে এগিয়ে চলার বহিঃপ্রকাশ। পূর্তির আগের দিন মেহেদি উৎসব দিয়ে শুরু হয়। ফলে বর্ষপূর্তিটি অন্যরকম মাত্রা পায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে আর কোনো ব্যাচ একই বর্ষের সব শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে করেনি। ‘তারুণ্য ৬৩’ নামটি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচ হিসেবে ৬৩তম থেকে এসেছে। প্রাণবন্ত একদল তরুণের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ব্যাচটি একত্র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ হওয়ায় ক্যাম্পাসে অনেকগুলো বিভাগ থাকার কারণে সাধারণত একই ব্যাচের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয় না। একজনের সঙ্গে আরেকজনের পরিচয় থাকে না। ‘তারুণ্য ৬৩’ একসঙ্গে হওয়ার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরির পাশাপাশি সব বিভাগের মধ্যে আন্তসম্পর্কও তৈরি করেছে। কথায় আছে, ‘দশের লাঠি, একের বোঝা’Ñএ কথাটিকে বাস্তবে প্রমাণের জন্য ‘তারুণ্য ৬৩’র উদ্যম, সাহস ও ঐক্যই যথেষ্ট। এ ব্যাচটির মাধ্যমেই একসঙ্গে পথচলার সাহস পেয়েছে পরের ব্যাচগুলো।
রাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, আমরা যে কাজটি আগে করতে পারিনি, সে কাজটি ‘তারুণ্য ৬৩’ করেছে। তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি এমন একটি উদ্যোগের জন্য। ‘তারুণ্য ৬৩’র ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত শাহীন বলেন, তরুণরা চাইলে অনেক কঠিন কাজকে সহজ করে দিতে পারে। আমরা তা করে দেখিয়েছি। প্রমাণ করেছি রাবির শিক্ষার্থীরা একত্র হলে অনেক কিছু করার সম্ভাবনা রাখে।
‘তারুণ্য ৬৩’ যে শুধু নিজেদের বর্ষের শিক্ষার্থীদের একত্র করেছে তা নয়; তারা সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মাধ্যমে ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থীর জন্য বিনোদনের ব্যবস্থাও করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি ছিল শিক্ষার্থীদের উপচেপড়া ঢল। এটা যতটা না আনন্দের, তার চেয়ে বেশি ছিল ‘তারুণ্য ৬৩’র সাহসিকতার জয়। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ক্যাম্পাস মিলনায়তন মিলনমেলায় পরিণত হয়। ভালোবাসার বন্ধনে বাধা পড়ে তারুণ্যের এই পথচলা বাঙালির ঐক্যবদ্ধ রূপকে প্রকাশ করে। ‘তারুণ্য ৬৩’র এই বন্ধন যেমন অটুট হয়ে আছে, তেমনি অটুট হবে বাংলাদেশের সব শিক্ষাঙ্গন এমনটাই প্রত্যাশা ব্যাচটির।
প্রত্যেকটি উদ্যোগের পেছনে কারও কারও ভূমিকা থাকে অনস্বীকার্য। এ ব্যাচটিকে একত্র করার ক্ষেত্রেও কেউ কেউ হার মানিয়েছেন আগেকার সব ঐক্যবদ্ধতার ইতিহাস। তাদের বন্ধুত্ব যেমন সবার জন্য উম্মুক্ত, তেমনি যেন তাদের বন্ধুত্বের গাঢ়তা ছাড়িয়ে যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশের অন্য শিক্ষাঙ্গনগুলোয়ও। ছড়িয়ে দেবে শান্তির বার্তা, বাড়িয়ে দেবে তারুণ্যের উদ্যমতা।
নাজমুল মৃধা পাভেল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়