দেশের ৬৪ জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী। বলা বাহুল্য, এমন ঘোষণা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। নীলফামারীর উন্নয়ন মেলায় দেওয়া বক্তৃতায় রেলমন্ত্রী এ ব্যাপারে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত পুনরুল্লেখ করেছেন মাত্র। দেশের বিভিন্ন সড়কে বেড়েছে যানজট। তাতে মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনীতিও
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের ৬৪ জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার ঘোষণা সুসংবাদ বটে। আমরা এর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করি।
বর্তমান সরকারের আমলে সেবার পরিধি বিস্তারে বিভিন্ন রুটে নতুন ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে কর্তৃক্ষকে। পুরনো বগি সংস্কার করা হয়েছে যথাসময়ে। নতুন রেল লাইন স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে কিছু জায়গায়। এ থেকে বোঝা যায়, নীতিগত এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক। অজানা নয়, এ খাতে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে অব্যাহতভাবে। এ ধারা অনন্তকাল চলতে পারে না। সেজন্য নতুন রুট চালুর ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের দিকটিও রাখতে হবে বিবেচনায়। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি যেভাবে হচ্ছে, তাতে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় থাকায় রেলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে ক্রমে। এও ঠিক, মানুষ চায় উন্নততর সেবা ও আরামদায়ক যাত্রা। যথাসময়ে না ছাড়া ও গন্তব্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ আছে ট্রেনের বিরুদ্ধে। বগির অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো ও সেবার মান নিয়েও আছে বিস্তর অভিযোগ। এসবের সমাধান করা গেলে নতুন রুটগুলোয় যাত্রী পেতে সমস্যা হবে না। আমরা চাইবো, সেবা চালুর আগে উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবে কর্তৃপক্ষ।
রেলের সুবিধা হলো, সড়কের মতো তার লাইনকে অন্য কোনো যানবাহনের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হয় না। সেজন্য যানজট মোকাবিলায় রেল নেটওয়ার্ক বাড়ানোর কৌশল অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে অনেক দেশকেই। আরও সুবিধা হলো, ব্যয়ও সড়কপথের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম। ৬৪ জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা গেলে যানজট মোকাবিলা ও পরিবহন ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে সুফল পাবে অর্থনীতি। আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার, রেলের সেবার মানে উন্নয়ন ঘটিয়ে বড় শহরগুলোয় কাজের খোঁজে আসা মানুষের চাপ কমানো সম্ভব। ঢাকার বাইরে যেসব শহর অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে আশপাশের জেলার সঙ্গে সেগুলোর রেল যোগাযোগও সহজ করা দরকার। কাজশেষে সুলভে ও নিরাপদে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা পেলে মানুষ অপরিকল্পিতভাবে ঠাঁই নিয়ে কোনো শহরকে ঢাকার মতো বাসের অযোগ্য করে তুলবে না। অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এসব পরিকল্পনা নেওয়া উচিত এখন থেকেই।