৬৬,৪৩২ ঘণ্টার কর্মযজ্ঞ ও অনন্য পদ্মা সেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক: নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পদ্মা সেতুর মাধ্যমেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলো। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায়, যা আজ জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে খুলে দেয়া হবে।

সময়ের পরিক্রমায় দেখা যায়, ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বরে মূল সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রমত্ত পদ্মার মাটির গভীর থেকে শুরু হয় কাজ। এরপর নানা উপকরণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে পদ্মা সেতুর পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো। স্বপ্ন এখন সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। উদ্বোধন করা হবে আজ, অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ জুন। সে হিসাবে পুরো সেতু নির্মাণে সময় লেগেছে মোট দুই হাজার ৭৬৮ দিন। আরেকটু বিস্তারিত বললে, ৬৬ হাজার ৪৩২ ঘণ্টা!

পদ্মা সেতুতে সর্বমোট ৬০টি দেশের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে চীন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, লুক্সেমবার্গ, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আরও ৫০টি দেশের কিছু না কিছু উপকরণ এতে ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ প্রকল্পে একসঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার মানুষ কাজ করেছেন।

৯ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু (মূল সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ও ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট) নির্মাণে বিশ্বের অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু মূল সেতুতে প্রায় দুই লাখ ৮৯ হাজার টন স্টিলের প্লেট লেগেছে, যার সবই এসেছে চীন থেকে। এছাড়া মূল সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে রডের ব্যবহার হয়েছে এক লাখ আট হাজার টন। গর্বের বিষয় হচ্ছে, এসব রডের সবই দেশীয়।

পদ্মা সেতুকে ভূমিকম্প-সহনীয় করতে সর্বোচ্চ ক্ষমতার বিশেষ ধরনের বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে। মোট বিয়ারিং লেগেছে ৯৬ সেট। সবচেয়ে বড় বিয়ারিংটির ওজন ১৫ টন। এসব বিয়ারিং তৈরি করা হয়েছে চীনে। তবে এগুলোর ভূমিকম্প সহনশীলতা পরীক্ষা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় সাত লাখ টন; এর সবই দেশে উৎপাদিত। তবে বেস গ্রাউটিং ও স্ক্রিন গ্রাউটিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরনের অতিমিহি সিমেন্ট। এ সিমেন্ট এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। খুবই ব্যয়বহুল এ সিমেন্টের প্রতি বস্তার দাম প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

পুরো নির্মাণকাজে মোট বালু ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় ৬৫ লাখ ঘনমিটার, যা দিয়ে ১৯ কোটি ১২ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের ভবন তৈরি করা যাবে। এছাড়া সেতুর ওপর রাস্তার ঢালাইয়ের প্রায় দুই হাজার ১০০ টন বিটুমিন লেগেছে। এই উপকরণও দেশ থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে।

সেতুতে ব্যবহার করা কংক্রিটের কিছু পাথর দেশ থেকে নেয়া হয়েছে। তবে বেশিরভাগই আনা হয়েছে ভারত, ভুটান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। কংক্রিটের গুণগত মান যাচাই করে তারপর কাজ করা হয়েছে।

সেতুর নিচে নদীতে ৪০টি ও দুই পাড়ে দুটি পিয়ার (খুঁটি) বসানো হয়েছে। সেতুকে টেকসই করতে নদীর অংশের খুঁটির নিচে চীন থেকে আনা তিন মিটার ব্যাসার্ধের ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত ইস্পাতের পাইল বসানো হয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে গভীর ও মোটা পাইল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০