বিশেষ প্রতিনিধি: প্রয়োজনীয় ডলার না পেয়ে কয়লা আমদানি করা যায়নি। এতে গত মাসে বন্ধ হয়ে যায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। একই কারণে দুবার রামপাল ও একাধিকবার বন্ধ হয় বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। ডলার সংকটে ব্যাহত হচ্ছে ফার্নেস অয়েল আমদানিও। এতে ৩৪টি ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্র আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ। খুঁড়িয়ে চলছে এগুলোর উৎপাদন। এতে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ফলে ঢাকা ছাড়া সারাদেশেই চলছে বড় ধরনের লোডশেডিং।
ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধেও জটিলতা তৈরি করছে ডলার সংকট। তাই লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেতে ছয় মাসে জরুরি ভিত্তিতে দরকার ৩৭৬ কোটি ডলার। তা না হলে আপাতত লোডশেডিং থেকে মুক্তি নেই বলে মনে করছেন পিডিবির কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ছয় মাসে ৩১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিও দিতে হবে।
তারা বলছেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়েকটি চালু হওয়ায় কয়লার চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া আদানি আসার পর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আসায় ফার্নেস অয়েলের চাহিদা কমেছে। এতে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ডলার চাহিদা ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পিডিবির তথ্যমতে, কয়লা ও ফার্নেস অয়েল আমদানি এবং ভারতের বিদ্যুতের বিল পরিশোধে ২০২২ সালের জুলাই মাসে দরকার হয়েছিল ৪২৩ মিলিয়ন ডলার, আগস্টে ৩৭৯ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বরে ৩৮০ মিলিয়ন, অক্টোবরে ২৯৯ মিলিয়ন, নভেম্বরে ২৪৪ মিলিয়ন ও ডিসেম্বরে ২০৫ মিলিয়ন ডলার। তবে চলতি অর্থবছর একই খাতে জুলাইয়ে দরকার হবে ৪৯৪ মিলিয়ন ডলার, আগস্টে ৫১৩ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বরে ৫০১ মিলিয়ন, অক্টোবরে ৪৯৩ মিলিয়ন, নভেম্বরে ৩৭৮ মিলিয়ন ও ডিসেম্বরে ৪০১ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া গত অর্থবছরের বিল বকেয়া রয়েছে ৯৭৭ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে গত অর্থবছর জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে লেগেছিল ১৩৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, কয়লা আমদানিতে ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে খরচ হয় ২৫৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এদিকে চলতি অর্থবছর জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে লাগবে ১১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, কয়লা আমদানিতে ১২৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে লাগবে ১৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে খরচ হবে ৩৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। অর্থাৎ ১১৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেশি লাগবে।
সূত্র জানায়, জুলাই মাসে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২৪১ মিলিয়ন ডলার ও কয়লা আমদানিতে ৯৭ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার। আগস্টে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২৪১ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১৬ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার।
একইভাবে সেপ্টেম্বরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২৩৩ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১২ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার। অক্টোবরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২২১ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১৬ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে অক্টোবরে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, নভেম্বরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ১১৬ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১২ মিলিয়ন ডলার। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে অক্টোবরে লাগবে ১৫০ মিলিয়ন ডলার। একইভাবে ডিসেম্বরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ১২০ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১৩৫ মিলিয়ন ডলার। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে লাগবে ১৪৬ মিলিয়ন ডলার।
প্রসঙ্গত, জুন পর্যন্ত কয়লা আমদানির বিল বকেয়া রয়েছে ৫৯৩ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া ৩৮৪ মিলিয়ন ডলার। এগুলো পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ খাতে বোঝা যুক্ত হয়েছে। এছাড়া বিদেশি ঋণের কিস্তি দিতেও বাড়তি ডলার লাগবে। এর মধ্যে জুলাইয়ে পিডিবির ইসিএ (এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি) ঋণের কিস্তি রয়েছে ২৪ মিলিয়ন ডলার, আগস্টে ১২ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বরে ১৭ মিলিয়ন, অক্টোবরে ২২ মিলিয়ন, নভেম্বরে ৭ মিলিয়ন ও ডিসেম্বরে ৩০ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেতে ডলারের পাশাপাশি ভর্তুকিও নিয়মিত ছাড় করতে বলেছে পিডিবি। এর মধ্যে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ছয় হাজার করে মোট ২৪ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া নভেম্বরে চার হাজার কোটি টাকা ও ডিসেম্বরে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ছয় মাসে বিদ্যুৎ খাতে ৩১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।