৭১৮ টন বন্ডের কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি

রহমত রহমান: ২৩টি বিল অব এন্ট্রিতে আমদানি হয়েছে এক হাজার ৯১৩ টন কাঁচামাল। এর মধ্যে ৭১৮ টন কাঁচামালের হদিস নেই। বন্ড সুবিধায় আমদানি করা এসব কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করা হয়নি। অবৈধ অপসারণ করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে ‘রেদওয়ান প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি এতে শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে প্রায় দুই কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট এ প্রতিষ্ঠানের বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও অনিয়ম উদ্ঘাটন করেছে। অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স স্থগিত ও বিন লক করা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, সাভারের বিরুলিয়া এলাকার রেদওয়ান প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষা সম্পন্ন করেনি। পরে প্রতিষ্ঠানটির আমদানি-রপ্তানির তথ্য খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। কমিশনারেটের সিআইএস সেল থেকে তথ্য নিয়ে দেখা যায়, রেদওয়ান প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড করোগেটেড কার্টন, ব্লাক বোর্ড, নেক বোর্ড, টিস্যু পেপার, হ্যাং ট্যাগ, বার কোড, ফটো কার্ড, সাইজ ট্যাগ, প্রাইস ট্যাগ ও সুয়িং থ্রেড উৎপাদন ও রপ্তানি করে।

প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ১২ জুন পর্যন্ত ২৩টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে এক হাজার ৯১৩ দশমিক ৮৭১ মেট্রিক টন কাঁচামাল আমদানি করেছে। এসব কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরি ও রপ্তানি না করে অবৈধভাবে অপসারণ করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। এই কাঁচামালের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ১৭ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার ৫০৭ টাকা, যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর ছয় কোটি ৯৩ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৩ টাকা।

সূত্র আরও জানায়, কাঁচামাল অবৈধ অপসারণের ব্যাখ্যা দিতে এবং আমদানি করা কাঁচামালের শুল্ককর পরিশোধে প্রতিষ্ঠানকে ২০২১ সালের ১৮ জুলাই দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কোনো জবাব

 দেয়নি। মামলাটি নিষ্পত্তির শুনানিতে অংশ নিতে প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দেয়া হয়। গত ২৭ অক্টোবর শুনানিতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম জুলফিকার হায়দার উপস্থিত হন। তিনি বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আমদানি করা এক হাজার ২৫৮ মেট্রিক টন কাঁচামালের ইউপি নেয়া হয়েছে, বাকি ৬৫৫ মেট্রিক টনের নেয়া হয়নি। রপ্তানির বিপরীতে পিআরসি পেয়েছেন তারা। সেই পিআরসির কপি দাখিল করা হয়েছে। কিছু ইউপির কপি বন্ড কমিশনারেটে দাখিল করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির কমিশনারেটে দাখিল করা কাগজপত্রে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ৫১টি ইউপির বিপরীতে এক হাজার ১৯৫ মেট্রিক টন কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্য রপ্তানি করেছে। রপ্তানির তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ড্যাশ বোর্ডে যাচাই করে তথ্য সঠিক পাওয়া গেছে। তবে বাকি ৭১৮ দশমিক ৩৪ মেট্রিক টন কাঁচামালের হিসাব দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এই কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা। অবৈধভাবে অপসারণ করা এ কাঁচামালে প্রযোজ্য শুল্ককর দুই কোটি ৬৫ লাখ ৬৮ হাজার ২৪৩ টাকা। কাগজপত্র ও দলিলাদি পর্যালোচনা করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে বিচারাদেশ দেয় বন্ড কমিশনার। গত ৯ মে এই বিচারাদেশ দেয়া হয়।

রায়ে শুল্ককর ও অর্থদণ্ডসহ মোট তিন কোটি ৬৮ হাজার ২৪৩ টাকার শুল্ককর সরকারি কোষাগারে জমা দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। বন্ড সুবিধার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বন্ড লাইসেন্স স্থগিত করা ও বিন লক করা হয়েছে বলে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের একাধিক কর্মকর্তা জানান।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রেদওয়ান প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম জুলফিকার হায়দারের সঙ্গে কয়েক দিন চেষ্টা করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও ব্যবস্থাপক মো. নুরুল হাসান জানান, বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করে বক্তব্য জানানো হবে। তবে পরে কয়েক দিন ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০