নিজস্ব প্রতিবেদক: নিপাহ ভাইরাসে ২০২৩ সালে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃতের সংখ্যা গত সাত বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। গতকাল রোববার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিপাহ ভাইরাসের ওপর নজরদারিতে জোর দিয়েছি। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও কেউ বেঁচে থাকলে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।’
সাধারণত সংক্রামিতদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি মারা যায়। যারা কাঁচা খেজুরের রস পান করেন ও আংশিকভাবে পাখি, বিশেষ করে বাদুড়ের খাওয়া ফল খায় তাদের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে যারা সংক্রমিতদের সংস্পর্শে আসেন তাদেরও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং তা দ্রুত একজন থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে, যা উদ্বেগের বিষয়।
ভাইরাস সংক্রমণ হয় কীভাবে?
নিপাহ ভাইরাস সাধারণত বাদুড়ে পাওয়া যায়। বিশেষ করে পরাগায়ন করা বাদুড় ছাড়াও যেসব বাদুড় পোকামাকড় খায় ও প্রাণীদের রক্ত পান করে, সেগুলো এই ভাইরাস ছড়ায়।
ফল খাওয়া বাদুড় থেকে শূকর, গবাদি পশু বা এমনকি মানুষের মধ্যে কীভাবে ভাইরাসটি সংক্রামিত হয় তা বিজ্ঞানীরা এখনও চূড়ান্তভাবে জানেন না। তবে ধারণা করা হয়, ফল বাদুড়ের দূষিত লালা ও মলের সংস্পর্শে এসে মানুষ এবং প্রাণী উভয়ই সংক্রমিত হতে পারে।
ভাইরাস এত বিপজ্জনক কেন?
নিপাহ ভাইরাস আক্রমণাত্মকভাবে মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল পাঁচ দিন থেকে দুই সপ্তাহের ইনকিউবেশন পিরিয়ড উল্লেখ করেছে।
প্রাথমিক লক্ষণগুলো ফ্লুর মতোÑজ্বর, বমি বমি ভাব এবং তীব্র মাথাব্যথা। কিছু রোগী শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। পরে মাথা ঘোরাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
এক থেকে দু’দিনের মধ্যে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে ও মারা যেতে পারে। নিপাহ রোগে মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ।
কীভাবে রোগের চিকিৎসা করা যায়?
নিপাহ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো টিকা বা ওষুধ নেইÑনা পশুদের জন্য, না মানুষের জন্য। ওষুধগুলো এখনও পর্যন্ত শুধু উপসর্গ উপশম করতে সক্ষম হয়েছে।
আক্রান্ত হলে শুরুতেই রোগীকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে হবে। একটি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) নিয়ে যেতে হবে, যেখানে পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে।
সংক্রামক রোগের বিস্তার বন্ধ করার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তি বা উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তিকে অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।
নিপাহ ভাইরাস কোথা থেকে আসে?
নিপাহ ভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার সুঙ্গাই নিপাহ গ্রামে। ফেব্রিল এনসেফালাইটিস-ভাইরাস মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। এতে ২২৯ জন ব্যক্তির মধ্যে গুরুতর শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ দেখা যায়।
কসাইখানায় কাজ করা পুরুষরাই প্রথম সংক্রমণের শিকার হন। এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কেউ পশু থেকে এই রোগে সংক্রমিত হতে পারে।
প্রায় একই সময়ে, মালয়েশিয়ার শূকরের মধ্যেও একটি অজানা রোগজীবাণুর মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, শ্রমিক ও শূকর একই ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়েছিল। সতর্কতা হিসেবে মালয়েশিয়ায় এক মিলিয়নের বেশি শূকর, যা দেশের মোট শূকরের অর্ধেককে হত্যা করা হয়েছিল।
তার পর থেকে অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা বিক্ষিপ্তভাবে দেখা গেছে। ২০০১ ও ২০০৩ সালে বাংলাদেশে এবং ২০১৮ ও ২০২১ সালে ভারতের কেরালা রাজ্যে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়।