Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:57 pm

৭ মাসে ভর্তুকি বকেয়া পড়েছে ২৮ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ২০২১ ও ২০২২ সালে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়। এতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে। যদিও চলতি বছরের শুরু থেকে কমছে জ্বালানি তেলের দাম। তবে গত দুই বছরের ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। অথচ দুই বছর ধরে চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকি ছাড় করছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে গত বছরের সাত মাসে (জুন-ডিসেম্বর) ভর্তুকি বকেয়া পড়েছে প্রায় ২৮ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা।

এর বাইরে মে মাসের আংশিক ভর্তুকি এখনও বকেয়া আছে। তার পরিমাণও প্রায় ৯৫৯ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২২ সালের ভর্তুকি বকেয়া পড়েছে ২৯ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। এতে বড় ধরনের তারল্য সংকটে পড়েছে পিডিবি। ফলে রেন্টাল, আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) ও সরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না সংস্থাটি। এমনকি ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের বিল পরিশোধও বিলম্বিত হচ্ছে।

পিডিবির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, গত বছর আট মাসের (মে-ডিসেম্বর) জন্য পিডিবি ভর্তুকি চেয়েছিল ৩২ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে মে মাসের ভর্তুকি বাবদ দুই হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। বাকিটা এখনও বকেয়া রয়েছে। এছাড়া জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো ভর্তুকি বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে জুনের বকেয়া চার হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, জুলাইয়ের চার হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা, আগস্টের চার হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরের চার হাজার ৪৮০ কোটি টাকা, অক্টোবরের তিন হাজার ৮৬১ কোটি টাকা, নভেম্বরের তিন হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বরে দুই হাজার ৫২০ কোটি টাকা।

এদিকে ভর্তুকির অর্থ নিয়মিত ছাড় না হওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে পিডিবি। বর্তমানে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেন্টাল, আইপিপি ও সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া পড়েছে। এছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া পড়েছে নভেম্বর ও ডিসেম্বরের।

পিডিবির তথ্যমতে, গত আগস্টে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল জমা পড়েছে সাত হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা এবং বকেয়া রয়েছে এক হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। বকেয়ার মধ্যে রেন্টাল ও আইপিপির বিল রয়েছে ৭৬০ কোটি টাকা এবং সরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল ৯৯৭ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল জমা পড়েছে সাত হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে দুই হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা এবং বকেয়া রয়েছে পাঁচ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। বকেয়ার মধ্যে রেন্টাল ও আইপিপির বিল রয়েছে তিন হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা এবং সরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল এক হাজার ২৪২ কোটি টাকা।

একইভাবে অক্টোবরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল জমা পড়েছে ছয় হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র ৬৩৭ কোটি টাকা এবং বকেয়া রয়েছে ছয় হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। বকেয়ার মধ্যে রেন্টাল ও আইপিপির বিল রয়েছে পাঁচ হাজার ২৯০ কোটি টাকা এবং সরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল ৮৮৭ কোটি টাকা। এই তিন মাস (আগস্ট-অক্টোবর) ভারতের বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া নেই।

এদিকে নভেম্বরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল জমা পড়েছে ছয় হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র ৪৪০ কোটি টাকা এবং বকেয়া রয়েছে পাঁচ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। বকেয়ার মধ্যে রেন্টাল ও আইপিপির বিল রয়েছে চার হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, সরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল ৯০০ কোটি টাকা এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া ১২৬ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ডিসেম্বরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল জমা পড়েছে ছয় হাজার ৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র ২৯৪ কোটি টাকা এবং বকেয়া রয়েছে পাঁচ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। বকেয়ার মধ্যে রেন্টাল ও আইপিপির বিল রয়েছে চার হাজার ৬৫০ কোটি টাকা, সরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল ৮৫০ কোটি টাকা এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া ২৬২ কোটি টাকা।

পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে জানান, গত বছর ফেব্রুয়ারির পর থেকে ভর্তুকির অর্থ নিয়মিত ছাড় করছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বড় ধরনের তারল্য সংকটে পড়েছে পিডিবি। অর্থ ছাড়ের যে অবস্থা তাতে জমে থাকা বকেয়া ছাড় হতে হতে চলতি অর্থবছর শেষ হয়ে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।