তিন গম্বুজবিশিষ্ট উত্তরাটি জামে মসজিদ। ৮০০ বছরের প্রাচীন এ নিদর্শনটি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া ইউনিয়নের মজলিশপুর উত্তরাটি গ্রামে। মসজিদটি প্রতিষ্ঠার প্রকৃত ইতিহাস জানা না গেলেও এটি যে প্রাচীন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মসজিদ ভবনের নির্মাণশৈলী দেখে অনুমান করা যায়, এটি কয়েকশ বছরের পুরোনো।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট আকৃতির এ মসজিদের মূল ভবনের ছাদের ওপর বড় বড় তিনটি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি দরজা। দু’পাশে রয়েছে ছোট দুটি জানালা। তবে দরজাগুলোর উচ্চতা কম হওয়ায় ভেতরে ঢোকার সময় মাথা নিচু করতে হয়। মসজিদের চার কোণায় মোটা আকৃতির চারটি পিলার রয়েছে। পিলারের ওপর রয়েছে চমৎকার কারুকাজ। মসজিদটি নির্মাণে কোনো লোহা ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। পোড়ামাটি ও চুনসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে নির্মিত হয়েছে এ মসজিদ। প্রাচীন হওয়ায় এখন পর্যন্ত মূল ভবনটি বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। তবে বর্তমানে মসজিদটির মূল ভবনে মুসল্লি সংকুলান না হওয়ায় এর পরিধি বৃদ্ধি করা হয়েছে। মূল ভবনের পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে বর্ধিত অংশ।
মসজিদের ইমাম মুফতি জুবায়ের আহম্মাদ জানান, আমি এখানে দেড় বছর যাবৎ ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তবে এলাকার প্রবীণদের কাছে শুনেছি, এ মসজিদটি নাকি অনেক পুরোনো। কেউ বলেন, মসজিদটির বয়স ৪০০-৫০০ বছর। আবার কেউ বলেন ৭০০-৮০০ বছর।
স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মসজিদ সংলগ্ন বাড়ির বাসিন্দা আজিজুর রহমান আরজু জানান, আসামের মালুনা সুন্দরী নামে এক মহিলা প্রচুর ধন-সম্পদ নিয়ে আমাদের এ গ্রামে এসেছিলেন। তিনি এখানে এসে আমাদের গোষ্ঠীর এক পূর্বসূরি পুরুষকে বিয়ে করে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। তখন মালুনা সুন্দরীই এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে শুনে আসছি।
স্থানীয় প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান জানান, মসজিদটি মোগল আমলে নির্মিত হয়েছে বলে আমরা মুরব্বিদের কাছে শুনেছি। তবে কে নির্মাণ করেছেন, তা বলতে পারব না। এরকম প্রাচীন আরেকটি মসজিদ উপজেলার হারুলিয়া গ্রামেও রয়েছে। দুটি মসজিদই একই সময় নির্মিত হয় বলে মনে করা হয়।
এদিকে হারুলিয়া জামে মসজিদের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ১২০০ সালে হারুলিয়া জামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় মোগল আমলে। হারুলিয়া জামে মসজিদ ও উত্তরাটি জামে মসজিদের নির্মাণশৈলীও একই রকম। তাই ধারণা করা হচ্ছে, দুটি মসজিদ একই সময় নির্মাণ করা হয়।
উত্তরাটি জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, আমাদের মসজিদটি যে ৮০০ বছরের প্রাচীন, তা আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। কত সালে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছেÑতা সঠিক বলতে না পারলেও মালুনা সুন্দরী নামে এক নারী যে এর প্রতিষ্ঠাতা, পারিবারিকভাবে আমরা এটাই জানি।
মো. জিয়াউর রহমান, নেত্রকোনা
