শেয়ার বিজ ডেস্ক:ভারতের অন্যতম পরিচিত ও বৃহত্তম সংস্থা আদানি গোষ্ঠী। বিলিয়নার গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন সংস্থাটি সবুজ ও পরিবেশ শক্তি (গ্রিন এনার্জি) প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চলেছে। এজন্য ৮০০ মিলিয়ন (৮০ কোটি) ডলার ঋণ চেয়েছে আদানি গোষ্ঠী, যা ভারতীয় স্থানীয় মুদ্রার হিসাবে ৬ হাজার ৫৩৪ কোটি রুপি। গত জানুয়ারিতে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের পর এটি তাদের নেয়া সবচেয়ে বড় ঋণ হতে চলেছে। খবর: হিন্দুস্তান টাইমস।
জানা গেছে, আদান গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে এই বৃহৎ ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী সুমিতোমো মিৎসুই ব্যাংকিং করপোরেশন, ডিবিএস ব্যাংক লিমিটেড, মিতসুবিশি ইউএফজে ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপসহ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। মূলত সংস্থাটি ৭০০ মিলিয়ন (৭০ কোটি) ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮০ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের করপোরেট জালিয়াতির অভিযোগে আদানি গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বাজারদর ব্যাপক হ্রাস পায়। এরপর ব্যাংক থেকে অর্থ পাওয়াও আগের চেয়ে বেশি কঠিন হয়ে যায় তাদের জন্য। যদিও গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন সংস্থাটি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। তবে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলো ১০০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলার হারিয়েছে।
জানুয়ারিতে শেয়ারের যে দর ছিল, তা এখনও পুনরুদ্ধার করতে পারেনি আদানি। এরই মধ্যে ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গৌতম আদানির বড় ভাই বিনোদ আদানি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনটি কোম্পানির ডিরেক্টর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কারমাইকেল রেল ও পোর্ট সিঙ্গাপুর, কারমাইকেল রেল সিঙ্গাপুর এবং অ্যাবট পয়েন্ট টার্মিনাল এক্সপেনশনÑএ তিন কোম্পানির ডিরেক্টর পদ থেকে ইস্তফা দেন বিনোদ আদানি। এ কোম্পানিগুলো অস্ট্রেলিয়ায় আদানি পরিবারের কয়লা খনির সঙ্গে সম্পর্কিত। হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে বিনোদ আদানির নাম সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছিল। তাদের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বিনোদ আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কিত জালিয়াতি করার জন্য অফশোর কোম্পানিগুলোর একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছিলেন।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, আদানি গোষ্ঠী শেয়ারের দামে কারসাজি করেছে। সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টও। কিন্তু তার কয়েকদিন আগে এ তিন কোম্পানির ডিরেক্টর পদ থেকে ইস্তফা দেন বিনোদ। ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আদানি গ্লোবালের দুবাই অফিসে বিনোদ আদানির একটি কেবিন রয়েছে এবং তিনি প্রতিদিন দুই-তিন ঘণ্টা সেখানে থাকেন। সাম্পতিক আইআইএফএল ওয়েলথ হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট অনুযায়ী বিনোদ
আদানি সবচেয়ে ধনী এনআরআই। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তিনি আদানি গ্রুপের অনেক বড় সিদ্ধান্তে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট কোম্পানিগুলোকে অধিগ্রহণ, গ্রিন এনার্জির ব্যবসা প্রভৃতি।
এ পরিস্থিতি থেকে সংস্থাকে পুনরুদ্ধার করতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয় আদানি গোষ্ঠী। বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা চালানো হয় সংস্থার পক্ষ থেকে। রোড শোর পাশাপাশি বেশ কিছু ঋণও শোধ করে দেয়া হয়। এখন সংস্থাটি আবার নিজের ব্যবসা বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ঋণ নিতে চলেছে আদানি গোষ্ঠী।
আদানি গোষ্ঠী ভারতীয় বহুজাতিক সংস্থা। এর সদর দপ্তর গুজরাট প্রদেশের আহমেদাবাদে শহরে অবস্থিত। ১৯৮৮ সালে গৌতম আদানি এ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসার মধ্যে রয়েছে বন্দর ব্যবস্থাপনা, বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন ও ট্রান্সমিশন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, খনি, বিমানবন্দর অপারেশন, প্রাকৃতিক গ্যাস, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং অবকাঠামো। তবে আদানি গোষ্ঠীর মোট রাজস্বের ৬০ শতাংশের বেশি আসে কয়লাজাতীয় ব্যবসা থেকে।