৮০% বকেয়া থাকলেও খেলাপি না করার প্রস্তাব বিটিএমএ’র

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান বিশ্বমন্দা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মেয়াদি ঋণের কিস্তির ২০ শতাংশ পরিশোধ অনুমোদন করে কিস্তির অবশিষ্ট টাকা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী চার বছরের মধ্যে পরিশোধ করার সুযোগ চেয়ে বেশ কিছু অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।

চিঠিতে বিটিএমএ বলেছে, মুদ্রার বিনিময় হার বেড়ে যাওয়া, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। বিটিএমএর সদস্য মিলগুলোকে যথাযথভাবে প্রণোদনা ও নীতিসহায়তা না দিলে এই কঠিন বিশ্ব পরিস্থিতিতে টিকে থাকা সম্ভব নয় বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাছেরের কাছে এই চিঠি দিয়েছেন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।

চিঠিতে বলা হয়, কভিড মহামারি ও পরবর্তীকালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অন্যান্য খাতের মতো টেক্সটাইল খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কভিড প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা প্রণোদনা ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আরও দুই বছর বৃদ্ধি (প্রচলিত ব্যাংক সুদহারে) করা উচিত। চলমান বিশ্বমন্দা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মেয়াদি ঋণের কিস্তির ২০ শতাংশ পরিশোধ অনুমোদন করে কিস্তির অবশিষ্ট টাকা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী চার বছরের মধ্যে পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া। অর্থাৎ ঋণের কিস্তির ৮০ শতাংশ বকেয়া থাকলেও খেলাপি না করার অনুরোধ জানাই।

এছাড়া রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ডলারের দামের সমহার নির্ধারণ করা অথবা ডলারের বিনিময়মূল্য নির্ধারিত না রেখে উš§ুক্ত করে দেয়া এবং ডলার অবমূল্যায়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এলসি সীমা বৃদ্ধি করা ও এলসি সীমা বৃদ্ধির ফলে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট বা একক ঋণগ্রহীতার সীমা অতিক্রম করলেও তা অনুমোদন করা।

চিঠিতে বিটিএমএ বলেছে, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে কভিড প্রাদুর্ভাবের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল ও উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। তার আলোকে বিটিএমএর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে আর্থিক প্রণোদনা বা ঋণের সুবিধা ভোগ করে আসছে।

বিটিএমএ আরও বলেছে, ‘যথাসময়ে এই প্রণোদনা ঋণের সুবিধা পাওয়ার ফলে আমরা প্রাথমিকভাবে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলাম। পরবর্তী সময় কভিড মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ, তৃতীয় ঢেউ, চতুর্থ ঢেউ প্রভৃতি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ব অর্থনৈতিক দুরবস্থা, ডলার বাজারের অস্থিরতা, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রভৃতি কারণে আমরা গত কয়েক মাস উদ্বেগজনকভাবে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, পরিবহন, শিল্পের কাঁচামালসহ সব পণ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
বর্তমান বিশ্বমন্দার পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানের খরচ বেড়ে গেছে বলে উল্লেখ করে বিটিএমএ বলেছে, কোনো প্রকার মার্জিন ছাড়াই প্রতিষ্ঠান চালাতে হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে লোকসান সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখতে হচ্ছে। বিটিএমএ জানিয়েছে, গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ এবং সম্প্রতি শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেকটা বেড়েছে।

প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ে ডলারের মূল্যের পার্থক্য প্রায় পাঁচ-ছয় টাকা কোনোভাবে কাম্য নয় বলে জানিয়েছে বিটিএমএ। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠান বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তারা আরও বলেছে, টাকার প্রায় ৪০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হওয়ার কারণে এলসির (নন-ফান্ডেড) যে সীমা অনুমোদন করা হয়েছে, তা দিয়ে আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।
বিটিএমএ মনে করে, এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে টেক্সটাইল শিল্প রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হবে। সেজন্য টিকে থাকার স্বার্থে এই শিল্পের প্রণোদনা ও নীতিসহায়তা প্রয়োজন।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০