Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:03 am

৮০ শতাংশ শেয়ারদর গুজবের ভিত্তিতে ওঠানামা করে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার একটি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা তাতে সন্দেহ নেই। যখন একজন ব্যক্তির হাতে উদ্বৃত্ত বা অলস অর্থ থাকে তখনই তার পুঁজিবাজারে আসা উচিত। বিশ্বের উন্নত পুঁজিবাজারগুলোয় ৮০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর মৌলভিত্তির ওপর নির্ভর করে ওঠানামা করে। অথচ আমাদের দেশের পুঁজিবাজার সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে ৮০ শতাংশ কোম্পানির দর ওঠানামা করে গুজবের ভিত্তিতে। আর ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয় মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে। তাই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, পরিচালনা পর্ষদে কারা রয়েছে ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনা উচিত। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি আবু জাফর মো. সালেহ এবং আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
আবু জাফর মো. সালেহ বলেনÑ পুঁজিবাজার একটি দেশের অর্থনীতির দর্পণ। একটি দেশের অর্থনীতির ভিত্তি নির্ভর করে সে দেশের পুঁজিবাজারে যে কোম্পানিগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাদের ভূমিকার ওপর। বর্তমানে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং ধীরে ধীরে আরও ভালোর দিকে যাচ্ছে। যদিও সময় একটু বেশি লাগছে। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিএসই ও বিএসইসি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, যেগুলো আসলে আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এ সিদ্ধান্তগুলো বিলম্বে নেওয়ার কারণে এতদিন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। সচেতন বিনিয়োগকারী একটি পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সচেতন বিনিয়োগকারী বলতে যে ধরনের বিনিয়োগকারীকে বোঝায়, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা এখনও সে পর্যায়ে যেতে পারেনি। পুঁজিবাজার একটি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা সন্দেহ নেই। যখন উদ্বৃত্ত বা অলস অর্থ হাতে থাকে তখনই একজন বিনিয়োগকারীর পুঁজিবাজারে আসা উচিত। বিশ্বের উন্নত পুঁজিবাজারগুলোয় ৮০ শতাংশ কোম্পানি মৌলভিত্তির ওপর নির্ভর করে শেয়ারদর ওঠানামা করে। অথচ আমাদের দেশের পুঁজিবাজার সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে ৮০ শতাংশ কোম্পানির দর ওঠানামা করে গুজবের ভিত্তিতে। আর ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয় মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কত? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, পরিচালনা পর্ষদে কারা রয়েছে ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনা উচিত। আর স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা কম থাকায় এসব কোম্পানি নিয়ে সহজেই কারসাজি করা যায়। তাই স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন এ ধরনের শেয়ার কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। সর্বোপরি একজন বিনিয়োগকারীকে দেখেশুনে, বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, কয়েকদিন আগে দুটি কোম্পানিকে ডিএসই থেকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে এবং আরও ১৫টি কোম্পানি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এছাড়া তিন কোম্পানির লেনদেন স্থগিত করাসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এসব পদক্ষেপ সম্পূর্ণ আইনসম্মত। এতে অনেক বিনিয়োগকারীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পদক্ষেপ আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। দেরিতে হলেও আমরা একে সাধুবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, কিছু জেড ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ার সারাবিশ্বে অনেক বিনিয়োগকারী কিনে থাকেন। তবে সব জেড কোম্পানির শেয়ার খারাপ বলা যাবে না। কিছু জেড ক্যাটেগরির কোম্পানি ভালোও করছে। অর্থাৎ যতগুলো জেড গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার রয়েছে তার মধ্যে ১০ শতাংশ ভালো করে। বিনিয়োগকারীরা এই পরিবর্তনের সুফল পান, তবে বেশিরভাগ কোম্পানি ভালো করতে পারে না। এতে বিনিয়োগকারীরা অনেক সমস্যায় পড়েন। জেড ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ার কিনে মুনাফা করতে হলে যাদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে তাদেরই কেনা উচিত। শুধু গুজবের ভিত্তিতে এ ধরনের শেয়ার কেনা উচিত নয়। তাতে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। বিশেষ করে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের শেয়ার কিনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, দেশের বর্তমানে অর্থনীতির গ্রোথ সাত দশমিক ৪০ শতাংশ। সামনে বাজার আরও ভালো হবে। তাই বাজার ভালো হওয়ার আগে পুঁজিবাজারকে স্বচ্ছ না করতে পারলে ফের ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সবশেষে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে অনেক ভালো মানের শেয়ার রয়েছে। যেসব কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয়, বার্ষিক মুনাফা, ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার ধারাবাহিকতা, কোম্পানির স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং মূলধন শক্তিশালী, এ ধরনের কোম্পানি বাছাই করে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। তাহলে পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা করা কঠিন হবে না।