৮১ শতাংশ আসনই শূন্য: অকার্যকর হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট

আবদুল হাকিম আবির: বাংলাদেশে গণতন্ত্রচর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট দেশের দ্বিতীয় সংসদ হিসেবে পরিচিত। তবে এ সিনেটের ৮১ শতাংশ আসনই শূন্য। ফলে উপাচার্য নিয়োগসহ অন্য প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিনেটের মতামতের কোনো প্রতিফলন হচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ’৭৩ অনুযায়ী ১০৫ সদস্যের সিনেট কমিটি থাকার কথা থাকলেও গত দুই যুগ ধরে এ নিয়ম মানছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে অপূর্ণাঙ্গ সিনেট দিয়েই চলছে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’খ্যাত ঐতিহাসিক এ বিদ্যাপীঠ। অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১০৫ জন সিনেট সদস্য থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে তার ৮৫টি আসনই শূন্য, যা মোট আসনের প্রায় ৮১ শতাংশ। শেয়ার বিজের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ’৭৩-এর আর্টিকেল ২০(১) অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন গবেষণা সংস্থার সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে এই পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। একইভাবে একাডেমিক পরিষদ কর্তৃক মনোনীত অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজগুলোর পাঁচজন অধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে এ পাঁচটি পদ শূন্য।

একাডেমিক পরিষদ কর্তৃক মনোনীত অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজগুলোর ১০ জন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে এ ১০টি পদ শূন্য রয়েছে। ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে এ পদগুলো খালি রয়ে গেছে। আর ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও এগুলোও শূন্য রয়েছে। এছাড়া পাঁচজন ছাত্রপ্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা নেই। এ পদগুলোও শূন্য।

বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের এসব শূন্য পদ নিয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘সিনেটের পদগুলো শূন্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ লঙ্ঘন হচ্ছে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট আমেরিকান সিনেটের আদলে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এখানে কিছু পদ শূন্য হয়, আবার কিছু পদ পূরণ হয়। কিন্তু একই সঙ্গে সব শূন্যপদ কখনও পূরণ হয় না।’

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকার কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তা, জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন সংসদ সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন শিক্ষাবিদ সিনেটে অন্তর্ভুক্ত আছেন। এছাড়া পদাধিকারবলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ), অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়), অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি), অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) সিনেটে অন্তর্ভুক্ত আছেন। এ পদগুলোয় বর্তমানে সিনেট সদস্য বহাল রয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের শূন্য থাকা এসব পদের কারণে স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর দীর্ঘ দুই যুগেও সিনেট পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘সিনেট পূর্ণ করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ। তারা যদি এ কাজ না করে, তবে আমাদের কিছুই করার নেই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন সিনেটকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই সিনেটের শূন্যপদগুলো পূরণে নির্বাচন আয়োজন করছে না। তাদের মতে, পূর্ণাঙ্গ সিনেট থাকলে বর্তমান উপাচার্য পুনরায় নির্বাচিত নাও হতে পারেন। এ আশঙ্কা থেকে সিনেট পূর্ণাঙ্গ করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটকে দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে যদি এ সিনেটকে কেউ অপব্যবহার করেন, তাহলে মনে করতে হবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শকে বিকিয়ে দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত সম্ভাব্য পদগুলো পূরণ করে নেওয়া।

তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক সিনেটকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচনের মাধ্যমে সিনেটের শূন্য আসনগুলো পূরণ করা হবে। দ্রুতই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০