মাসুম বিল্লাহ: ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এতে দেখা যাচ্ছে দেশে বর্তমানে বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিতদের ৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের সংখ্যা বাড়লেও তার গতি খুবই মন্থর। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন উপাত্ত উঠে আসে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১০ সালে কর্মরতদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান ছিল ৮৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ২০১৩ সালে তা কিছুটা কমে ৮৭ দশমিক চার শতাংশে নেমে আসে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ হার ছিল ৮৬ দশমিক দুই শতাংশ। আর সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জরিপে তা নেমে এসেছে ৮৫ দশমিক এক শতাংশে। অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান ধীরে ধীরে কমে এলেও তা সন্তোষজনক নয়। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় এ হার বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেম শেয়ার বিজকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার বেশি। তবে এ হার কমিয়ে আনতে হবে। সেজন্য কর্মসংস্থানে যারা আছেন, তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি বিসিক শিল্পনগরীগুলোয় কর্মরতদেরও নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
বিবিএসের সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, দেশে এখন বেকারের হার বেড়ে ২৬ লাখ ৮০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এক বছর আগে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ বেকার ১৪ লাখ। নারী বেকার ১৩ লাখ। বেকারের সংজ্ঞা হিসাবে বিবিএস বলছে, সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টাও কাজ যারা করেনি, তাদের বেকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মানদণ্ড অনুযায়ী এই সংজ্ঞা নির্ণয় করা হয়েছে।
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ১৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ। এর মধ্যে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছয় কোটি আট লাখ। তার মধ্যে বেকার ২৬ লাখ ৮০ হাজার। বাকিরা বিভিন্ন ধরনের কর্মে নিয়োজিত।
শ্রমশক্তি জরিপ থেকে জানা যায়, সারা দেশে কাজ করতে ইচ্ছুক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সার্বিক বেকারের হার চার দশমিক দুই শতাংশ; সেখানে উচ্চশিক্ষা শেষ করাদের মধ্যে এ হার ১১ শতাংশের ওপর। অথচ শারীরিকভাবে তারাই বেশি কর্মক্ষম। ২৯-এর নিচে।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা বলছেন, চাকরিদাতা চাহিদা অনুপাতে কর্মী পাচ্ছে না। কর্মক্ষেত্রে এখন যে ধরনের চাকরি রয়েছে, সেখানে যাওয়ার মতো যোগ্যতা নেই শিক্ষার্থীদের। অন্যদিকে বেকার তরুণরা যে ধরনের ও যে বেতনের চাকরি প্রত্যাশা করেÑসেটা তারা পাচ্ছে না। দুই প্রত্যাশার মধ্যে মিল না থাকায় দেশের বেকারের হার বাড়ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শিক্ষিত মানুষের চাকরির সুযোগ আছে। সেটি অফুরন্ত। কিন্তু বাজারে যে ধরনের দক্ষ মানুষের চাহিদা রয়েছে, শিক্ষিতদের মধ্যে অনেকে সে চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। ফলে বিদেশ থেকে এনে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এতে দেশে শিক্ষিতদের অনেকে বেকার থাকছে।
উচ্চশিক্ষায় বেকার বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চের (সিডার) নির্বাহী চেয়ারম্যান রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, তিন কারণে দেশে উচ্চশিক্ষায় বেকারের হার বাড়ছে। প্রথমত, এখনকার কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। তাই যারা চাকরিদাতা, তারা প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ লোক চান। দ্বিতীয়ত, নিয়োগকারী যে ধরনের শিক্ষা ও শিক্ষার গুণগত মান চান, সেটি পাওয়া যাচ্ছে না। তৃতীয়ত, চাকরি প্রত্যাশীর প্রত্যাশা অনুপাতে কাজ পাচ্ছেন না। এসব কারণে দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকার বাড়ছে। তিনি বলেন, তরুণ সমাজের উচিত চাকরির পেছনে না ছুটে আত্মকর্মসংস্থানের দিকে নজর দেওয়া।