সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল লিমিটেডের কাছে ভ্যাট বাবদ চট্টগ্রাম কাস্টমসের পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৬০ কোটি টাকা। বকেয়া ভ্যাট আদায়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) কয়েক দফা চিঠিও দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু দেনা পরিশোধে বিপিসির প্রয়োজনীয় নির্দেশনা না থাকায় গত তিন বছরেও তা পরিশোধ করেনি যমুনা অয়েল।
চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন যমুনা অয়েলের কাছে জুলাই ২০১৩ থেকে জুন ২০১৫ পর্যন্ত বকেয়া ভ্যাট বাবদ পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৬০ কোটি টাকা। এ অর্থ পরিশোধে বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ ও দ্বিপক্ষীয় অনেক আলোচনা করা হয়। কিন্তু পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করছে যমুনা। এ নিয়ে বেশ কয়েক বার এনবিআরের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে বিপিসির চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু পাওনা পরিশোধে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যান বরাবর আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। বিপুল রাজস্ব ঘাটতি নিরসনে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাওনা ভ্যাট আদায়ে গত বছরের শেষ দিকে তৎপর হয় এনবিআর। এর অংশ হিসেবে বিপিসির পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এশিয়াটিক স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের কাছে মোট দুই হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা আদায়ে চিঠি দেওয়া হয়। এ নিয়ে দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টানাপড়েন চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের কোম্পানির এজিএম (অর্থ) ও কোম্পানির সচিব নাজমুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের বকেয়া ভ্যাট নেই। যেহেতু বিপিসি আমদানি করে, তাই এটা তাদের কাছে পাওনা। ফলে ভ্যাটজনিত এ পাওনা পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব নয়। এটা বিপিসির দায়িত্ব। কারণ আমরা বিপিসির আওতাধীন একটি বিপণন প্রতিষ্ঠান হিসেবে তেল খালাস করি মাত্র। ফলে বিপিসি এ পাওনা পরিশোধ করবে।’
বিপিসির সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মোট জ্বালানি তেলের বিক্রি ছিল ৫২.৫৬ লাখ মেট্রিক টন। দেশের জ্বালানি খাতের বৃহৎ কোম্পানি যমুনা অয়েল লিমিটেড পেট্রোলিয়াম পণ্য ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, জেট এ ওয়ান, অকটেন, পেট্রল, কেরোসিন, জেবিও, লুব অয়েল, এসবিপি, এলডিও, এমবিপি, এলপিজি, বিটুমিন ইত্যাদির মোট জ্বালানি বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৬.০৬ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ছিল ১৬.৩৪ লাখ মেট্রিক টন। এতে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ১৯২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা হয় ২৪১ কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার, যা একই সময়ে আগের বছরে ছিল ১৭৭ কোটি পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে দুই কোটি টাকা মূলধন নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় তেল কোম্পানি হিসেবে পাকিস্তান ন্যাশনাল অয়েল লিমিটেড (পিএনওএল) নামক কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ অ্যাব্যানড্যান্ড প্রোপার্টি (কন্ট্রোল, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ডিস্পোজাল) আদেশ ১৯৭২ (পিও নং ১৬, ১৯৭২) বলে পাকিস্তান ন্যাশনাল অয়েল লিমিটেডকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। পরে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয় এবং এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল অয়েলস লিমিটেড। ১৯৭৩ সালে ১৩ জানুয়ারি এক সরকারি আদেশ বলে এর পুনঃনামকরণ করা হয় যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (জেওসিএল)। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মালিকানাধীন এ কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
Add Comment