নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস না করায় ৮৯ কনটেইনার (দুই হাজর ৪৫৭ মেট্রিক টন) কাঁচা পণ্য ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম। ইতোমধ্যে গত দুদিনে ৩৪ কনটেইনার পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। বাকি কনটেইনারগুলো আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে ধ্বংস করা হবে।
জানা যায়, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ধ্বংসযোগ্য ১০৯টি কনটেইনার রয়েছে। এসব কনটেইনার ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে আমদানি করা হয়েছে। কোনো শিপিং এজেন্ট থেকে খরচের টাকার নিশ্চয়তা পেলে এর সঙ্গে বাকি ২০ কনটেইনারও ধ্বংস করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (নিলাম) মিয়া মো. নাজমুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমদানিকৃত পণ্য সময়মতো আমদানিকারকরা খালাস না করলে কাস্টম কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় এসব পণ্য নিলামে তুলতে পারে। নিলাম করার আগে এসব পণ্য আমরা (ইনভেন্ট্রি) তালিকা করে থাকি। ভালো পণ্যগুলো আইন অনুযায়ী নিলাম করা হয়। নষ্ট পণ্য থাকলে সেগুলো ধ্বংস করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় ৮৯ কনটেইনার কাঁচা পণ্য ধ্বংস করা প্রক্রিয়া চলছে। এটিই কাস্টমসের আগের যেকোনো সময় থেকে বড় ধ্বংস প্রক্রিয়া। আরও ২০টি এ তালিকায় আছে। এগুলো শিপিং কোম্পানিরা খরচের টাকা দিতে রাজি হলে ধ্বংসের কাজ শুরু হবে।’
কাস্টমস নিলাম শাখা জানায়, ধ্বংসযোগ্য এসব কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন ইয়ার্ডে ২০০৭ থেকে পড়ে ছিল। এসব কনটেইনার একদিকে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে কাস্টমস। এছাড়া কনটেইনারগুলোর অনেক টাকা বিদ্যুৎ বিল ও রেপাড চার্য বকেয়া রয়েছে। কোনো কোনো কনটেইনারের বিদ্যুৎ বিল বেশ কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত বকেয়া আছে। ফলে আমদানিকারকরা খালাস না করায় দায়ভার নিতে হয় শিপিং এজেন্টকে। এসব শিপিং এজেন্ট বকেয়া কম বা না দেওয়ার জন্য বন্দরের সঙ্গে আলোচনা করে থাকে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে বলেও জানা যায়।
চট্টগ্রাম বন্দরের ডিরেক্টর ট্রাফিক গোলাম সরওয়ার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শিপিং এজেন্টদের বিদ্যুৎ বিল বা রেপড চার্জ বকেয়া রাখার সুযোগ নেই। কারণ বিদ্যুৎ আমাদের নিজেদের না। শিপিং এজেন্ট বিল পরিশোধ না করলেও পিডিবিকে বিল দিয়ে দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে বিল অবশ্য পরিশোধ করতে হবে। এ নিয়ে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর রায় আমাদের পক্ষে এসেছে।’
নিলাম শাখা সূত্রে আরও জানা যায়, ধ্বংসযোগ্য এসব কনটেইনার ছয়টি শিপিং এজেন্টর। এর মধ্যে মাক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের ৩৮ লটে ৬৬টি কনটেইনার রয়েছে। পিআইএল (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সাত লটে সাটটি কনটেইনার। এপিএল বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড ছয় লটে ৯টি কনটেইনার। ইয়ং মেইন লাইন (ট্রাসমেরিন লজেস্টিক লি.) তিন লটে চারটি কনটেইনার। ইন্টারমডেল পিটিই লিমিটেড এক লটে দুই কনটেইনার এবং জিবিএক্স লজেস্টিকের এক লটে একটি কনটেইনার। মোট ৫৬ লটে ৮৯ কনটেইনার। ধ্বংসযোগ্য এসব কাঁচা পণ্যের মধ্যে রয়েছে মাল্টা, আপেল, কমলা, আনার, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মাছ ও আইসক্রিম।
কাস্টম সূত্রে জানা যায়, এতে ছয়টি শিপিং এজেন্টের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ আমদানিকারক এসব পণ্য আমদনি করে। এর মধ্যে সব থেকে পুরোনো ২০০৭ সালের আইসক্রিমের একটি কনটেইনার রয়েছে। এ কনটেইনারটি মাক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের। এটির আমদানিকারক ছিল আবদুল মোনেম লিমিটেড ইগলু আইসক্রিম ফ্যাক্টরি। এছাড়া একটি মাত্র মাছের কনটেইনার রয়েছে। এটিও মাক্স বাংলাদেশের কনটেইনারে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান ইউনুস সি ফুড করপোরেশন ২০১৬ সালে আমদানি করে। বাকিগুলোর মধ্যে মাত্র তিন কনটেইনার ২০১৫ সালে আমদানিকৃত পেঁয়াজ রয়েছে। অন্যগুলোয় আপেল, কমলা, মাল্টা, আদা ও রসুন রয়েছে। এসব কনটেইনারের মধ্যে ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরে মধ্যে আমদানি করা সর্বাধিক।
মাক্স বাংলাদেশের লিমিটেড ক্লেইম ম্যানেজার বিকাশ দাস বলেন, ‘মাক্স বাংলাদেশের ৬৬টি কনটেইনার রয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় মাক্স বাংলাদেশের অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। যেমন ২০০৭ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে আছে আমাদের একটি কনটেইনার। এটির আমদানিকারক ছিল আবদুল মোনেম লিমিটেড। আমাদানির পর যদি সময়মতো খালাস করা হতো, তাহলে এ কনটেইনার থেকে আমাদের অনেক টাকা আয় হতো।’