শেয়ার বিজ ডেস্ক: ধারাবাহিকভাবে দরপতন ঘটছে ভারতের আলোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানির বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের। মূলত মার্কিন পরামর্শক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে এ পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ওই প্রতিদেন প্রকাশের পর গত আট দিনেই আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দর পতন হয়েছে ১০৮ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে ব্যবসায়িক গোষ্ঠীটির কর্ণধার গৌতম আদানি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ও এশিয়ার শীর্ষ ধনীর মুকুট হারান।
মার্কিন গণমাধ্যমে ব্ল–মবার্গের এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, পুঁজিবাজারে গৌতম আদানির বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আট নিদের ব্যবধানে ১০৮ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে, যা ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতনগুলোর একটি। শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এমনটি লক্ষ্য করা গেছে।
গত ২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ভারতের পুঁজিবাজারের ওপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছর ধরে আদানি গ্রুপ শেয়ারবাজারে জালিয়াতি করে যাচ্ছে। হিন্ডেনবার্গের দাবি, আদানি গোষ্ঠী ভুল তথ্য ও রাজনৈতিক সূত্রে প্রাপ্ত বিভিন্ন সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যমে বাজারকে প্রভাবিত করছে এবং এর মাধ্যমেই আদানি গ্রুপ বাজারে নিজেদের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। আদানি গত বছর ১৪৭ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন। হিন্ডেনবার্গ তার প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আদানির কোম্পানিগুলোর রাজস্ব এবং শেয়ারদর
প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পদ বাড়িয়েছে। এ অভিযোগের পর থেকে আদানির ব্যক্তিগত সম্পদ প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার কমেছে। জাল-জালিয়াতি ও কারসাজির আশ্রয় নিয়ে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকির অভিযোগও রয়েছে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে। মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য ভারতীয় ধনীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে তিনি ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেন। পরে হঠাৎ করে তিনি গত বুধবার শেষের দিকে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
একইসঙ্গে এ পরিস্থিতির যদি নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না হয়, তবে সামনের দিনগুলোতে আদানি গ্রুপের লোকসান আরও বাড়বে বলে গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। ফ্রান্সের সরকারি বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি টোটাল এনার্জিস এবং আমিরাতভিত্তিক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি আবুধাবি’স ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানির সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি করেছে আদানি গ্রুপ।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই চুক্তিপত্রেও নিজেদের সক্ষমতা সম্পর্কে ‘অতিরঞ্জিত’ তথ্য দিয়েছে গৌতম আদানির প্রতিষ্ঠান। ছোটবেলায় স্কুল থেকে ঝরে পড়া গৌতম আদানি গত কয়েক বছর ধরেই ভারতের শীর্ষ ধনীদের একজন। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের বাসিন্দা এবং ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া থাকায় দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত তিনি। এই রাজনৈতিক যোগাযোগ কাজে লাগিয়েই গত কয়েক বছরে রীতিমতো ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল আদানি গ্রুপ। এর ধারাবাহিকতায় ৬০ বছর বয়সী গৌতম আদানি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী।
এদিকে আদানি সাম্রাজ্যের এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে মোদি সরকার কী প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটি জানার অপেক্ষায় এখন সবাই। দেশটির প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। যেখানে প্রযুক্তি ও রেলমন্ত্রী ব্লুমবার্গ টিভিকে বলেছিলেন, আদানির শেয়ারের দরপতন সহ্য করার সক্ষমতা ভারতের অর্থনীতির আছে। মোদি এবং আদানিকে ব্যাপকভাবে ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচনা করা হয়। যদিও অতীতে আদানি বলেছিলেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক সুবিধা চান না।
এছাড়া পুঁজিবাজার বিশ্লেষণকারী বিভিন্ন সংস্থার বরাতে জানা গেছে, গড় হিসেবে গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত সব কোম্পানির শেয়ারের দাম গত আট দিনে কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। অনেক বিনিয়োগকারী আদানি গ্রুপ থেকে তাদের অর্থ তুলে নিচ্ছেন।
আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে অবশ্য এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন ‘মিথ্যা’, ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘শত্রুতাপূর্ণ’। আরও বলা হয়েছে, ভারতের শেয়ারবাজার সম্পর্কে ‘কোনো ধারণা নেই’ হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের। এমনকি এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ভারত রাষ্ট্র, এর স্বাধীনতা ও সংহতিকে ‘আক্রমণ’ করেছে বলে অভিযোগ আদানি গ্রুপের। এ জন্য হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধ আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারিও দেয়া হয়েছে গ্রুপটির পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে হিন্ডেনবার্গ আদানির বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে। তারা বলছে, ভারতের ভবিষ্যৎ আদানি গ্রুপ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। কোম্পানিটি নিজেকে ভারতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করে পদ্ধতিগতভাবে জাতিকে লুট করছে। হিন্ডেনবার্গ জানায়, আদানির ৪১৩ পৃষ্ঠার জবাবের মধ্যে মাত্র ৩০ পৃষ্ঠা প্রতিবেদনের সঙ্গে সম্পর্কিত। অবশিষ্ট অংশে অপ্রাসঙ্গিক করপোরেট উদ্যোগের বিবরণ রয়েছে। যেমন এটি কীভাবে মহিলা উদ্যোক্তা ও নিরাপদ সবজি উৎপাদনকে উৎসাহিত করে সেই তথ্য সেখানে দেয়া হয়েছে।