৮ বছর ধরে ঝুলছে ওরিয়নের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ!

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক দশক আগে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল ওরিয়ন। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ওরিয়নের সঙ্গে চুক্তি সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ৪৫ মাসের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের কথা থাকলেও পেরিয়ে গেছে আট বছর (৯৬ মাস)। এখনও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরুই করতে পারেনি ওরিয়ন। এমনকি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের স্থান এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রকল্পটির অর্থায়ন নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

সূত্রমতে, গজারিয়ার ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২ (ঢাকা-২) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি সই করা হয়েছিল। এতে কেন্দ্রটির বিদ্যুতের দাম তথা লিবারালাইজড ট্যারিফ ধরা হয় ০.০৮৩৭ ডলার বা ছয় টাকা ৬৯ পয়সা। তবে কয়লার দাম কমলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম কমে পাঁচ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে ছয় টাকার মধ্যে নেমে আসবে বলে উল্লেখ করা হয়।

বিদ্যুৎ কেনার পাশাপাশি কেন্দ্রটির নির্মাণ চুক্তিও সই হয়েছিল একই দিন। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বয়লার, টারবাইন ও জেনারেটর কেনায় যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের সঙ্গে এবং নির্মাণের জন্য চীনের গুয়াংডং ইলেকট্রিক পাওয়ার ডিজাইন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি হয়। ২০১৮ সালে প্রকল্পটির পরিবেশগত সমীক্ষা (ইআইএ) করা হয়। যদিও অজ্ঞাত কারণে এর নির্মাণকাজ আর শুরু হয়নি।

এদিকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিডিবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গজারিয়া থেকে মাতারবাড়িতে স্থানান্তর করা হবে। সম্প্রতি প্রকাশিত পিডিবির আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে বিকল্প জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য কমপক্ষে ৩০ একর জমি লাগবে। এক্ষেত্রে মাতারবাড়িতে পিডিবির জমি দীর্ঘমেয়াদে ইজারা নেবে ওরিয়ন।

সূত্র জানায়, মূলত কয়লা পরিবহন সহজতর করতে কেন্দ্রটি মাতারবাড়িতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কারণ সমুদ্রপথে আনা কয়লা খালাস করে তা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া পর্যন্ত সড়কপথে আনা খুবই জটিল ও ব্যয়বহুল। তবে মাতারবাড়িতে জমি চিহ্নিত হলেও কবে নাগাদ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হবে তা নিশ্চিত নয়।

অন্যদিকে, পিডিবির সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিল ওরিয়ন। পিডিবির জমিতে ওরিয়ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করতে চায় বলেই এ প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে পিপিপিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাজি হয়নি পিডিবি। এক্ষেত্রে বিল্ড ওন অপারেট (বিওও) পদ্ধতিতে কেন্দ্রটি নির্মাণের সুপারিশ করে পিডিবি।

সূত্রমতে, আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে কেন্দ্রটি চালানোর জন্য চুক্তি হয়েছিল। তবে এখনও কয়লা আমদানির উৎস নির্ধারণ করেনি ওরিয়ন। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে বিদেশি ঋণ নেয়ার কথা ছিল। তবে বিশ্বব্যাপী কয়লাবিদ্যুৎকে নিরুৎসাহিত করতে এ খাতে ঋণ দেয়া বন্ধ করে দেয় অনেক প্রতিষ্ঠান। এতে বিদেশি ঋণ না পেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা সিন্ডিকেট ঋণ নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়।

যদিও সম্প্রতি গ্লোবাল এনার্জি মনিটরের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বুম অ্যান্ড বাস্ট কোল ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওরিয়নের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখনও সুনির্দিষ্ট অর্থায়ন পায়নি। অথচ ৪৫ মাসের নির্মাণচুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের শুরুতে কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। পরে তা পিছিয়ে ২০২৩ সাল করা হয়। গত বছর তা পিছিয়ে ২০২৬ সাল ধরা হয়েছিল। সম্প্রতি তা আরেক দফা পিছিয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে।

৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আট বছর ধরে ঝুলতে থাকা ও নির্মাণ শুরু করতে না পারাসহ নানা বিষয়ে জানতে ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে শেয়ার বিজের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে ওরিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওবায়দুল করিমকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নসহ মেসেজ দেয়া হলে তিনি তার উত্তর দেননি। এমনকি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ওরিয়নের প্রধান কার্যালয়ে দেখা করে মন্তব্য নিতে একাধিক দিন গেলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা প্রতিবেদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।

প্রসঙ্গত, এর আগে সুন্দরবনের কোলঘেঁষে ৫৬৫ মেগাওয়াটের আরেকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল ওরিয়ন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য অর্থায়নের সংস্থান করতে না পারায় অনেক বছর ঝুলে ছিল প্রকল্পটি। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের জুনে প্রস্তাবিত ১০টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন বাতিল করে দেয় সরকার। সে সময় ওরিয়নের খুলনা পাওয়ার নামক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও বাতিল হয়ে যায়।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০