৮ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন

প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ ফুলজোড়, করতোয়া, ইছামতি, হুড়াসাগর ও চলনবিলসহ নদনদীর পানি বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চলের ফসলি জমি। এতে বন্যা আতঙ্ক বিরাজ করছে চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে। 

যমুনায় দ্রæত পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ি ইউনিয়নের সানবান্ধা ঘাট থেকে বিশুরি গাছা ঘাট ও শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের পাঁচিল, হাট পাঁচিল, জালালপুর ও সৈয়দপুর গ্রামে রাক্ষসী যমুনার তীব্র ভাঙন চলছে। কোনো কিছুতেই তার ভাঙন ও লণ্ডভণ্ড তাণ্ডব থামছে না। কবে যে যমুনার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটবে কেউই তা জানে না। রাক্ষসী যমুনার ভাঙনে জেলার তিনটি উপজেলার প্রায় ৮ শতাধিক বসতবাড়ি ও হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার সকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, চলতি মৌসুমে যমুনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব অঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার কাজিপুর, সদর ও শাহজাদপুরে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

পাউবোর অফিস সূত্র জানায়, যমুনা নদীর ভাঙন রক্ষায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী, জালালপুর ও খুকনী ইউনিয়নের এনায়েতপুর থেকে পাঁচিল পর্যন্ত নদীতীরের সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ সমাপ্ত হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। নির্দিষ্ট সময়ে বাঁধ নির্মাণ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

স্থানীরা জানায়, ভাঙনের মুখে থাকা সদর উপজেলার কাওয়াকোল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড় কয়রা কমিউনিটি ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রির জন্য সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস প্রকাশ্যে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এছাড়া দুটি মুজিব কেল্লা, সাড়ে ৪ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, বর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে রয়েছে। গতকাল বিকালে শাহজাদপুরের পাঁচিল গ্রামের কোবাদ মাস্টারের দোতলা ভবন নদীতে ধসে পড়েছে। এছাড়া বহু ঘরবাড়িও নদীতে ভেঙে পড়ছে। সহায় সম্বল হারিয়ে এসব পরিবারের মানুষ এখন নিঃস্ব। এসব অঞ্চলগুলোয় দ্রæত ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না নিলে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ অনেক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।

সদর উপজেলার কাওয়াকোল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান (জিয়া মুন্সি) বলেন, নদীভাঙনে জেলার মানচিত্র থেকে মুছে যেতে চলেছে কাওয়াকোলা ইউনিয়ন। ভাঙন রোধে পাউবো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কাওয়াকোলা ইউনিয়নের হাট বয়ড়া, দৌগাছী, বড়কয়রা, ছোট কয়রা, কৈগাড়ী দড়তা, চন্ডল বয়ড়া, বেড়াবাড়ী গ্রামে তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেক গ্রাম ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের কারণে কমিউনিটি ক্লিনিক নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনের কারণে যে কোনো মুহূর্তে বয়কয়রা কমিউনিটি ক্লিনিক নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ কারণে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নিলাম বিক্রির কমিটি গঠন করে প্রকাশ্যে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে, শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পাকড়তলা গ্রামের লাল মিয়া ও পাঁচিল গ্রামের আলাউদ্দিন, কালাম শেখ, আয়নাল হকসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, চলতি মৌসুমে নদীভাঙনে এলাকার অন্তত ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে বহু মানুষ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি নদীতে চলে যাওয়ায় আমরা এখন ভ‚মিহীন। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। পাউবোর ঠিকাদাররা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করত, তাহলে আমাদের এ সর্বনাশ হতো না।

এ বিষয়ে জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ জানান, নদী ভাঙনে খুকনী, কৈজুরী ও জালালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে জালালপুর ইউনিয়নের পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চলের শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। তিন বছরেও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প শেষ না হওয়ায় নদীতীরের মানুষজনকে এমন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের গেজ রিডার হাসান মামুন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদী শহর রক্ষা বাধ পয়েন্টে পানি ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, নদীর পূর্বপাড়ে চর জেগে ওঠার কারণে প্রকল্প এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য নদীতে খনন কাজ চলছে। ভাঙন রোধে কাজ করা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন রয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা চিহ্নিত করে জিও ব্যাগভর্তি বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০