Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:03 am

৮% সূচক হারিয়েছে পুঁজিবাজার লেনদেন কমেছে ৩৩ শতাংশ

আতাউর রহমান:সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ (জুলাই-মার্চ) মাসে দেশের পুঁজিবাজারে সূচকের কোনো উন্নতি হয়নি। বরং এই সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বাজারের লেনদেন কমে গেছে। আর গত অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক ডিএসইএক্স প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। তবে এ সময়টিতে ব্ল–চিপ কোম্পানির সূচক ডিএসই-৩০ মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।

বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ডিএসইএক্স এবং ডিএসই-৩০ দুটি সূচকই যথাক্রমে ৮ দশমিক ২ এবং ১০ দশমিক ৭ শতাংশ হারে কমেছে। এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) লেনদেন বৃদ্ধি পেলেও পরের প্রান্তিকগুলোতে ক্রমাগতভাবে লেনদেন কমে গেছে। এতে অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে লেনদেন নেমে এসেছে ৪০০ কোটি টাকার ঘরে। দেশের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা এবং বৈশ্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ কারণে পুঁজিবাজার আংশিক মন্দা ছিল বলে জানিয়েছেন তারা। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদেন পুঁজিবাজারের এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসইএক্স জানুয়ারি-মার্চ সময়ে প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। যদিও ডিএসই-৩০ সূচক কিছুটা বেড়েছে। অর্থবছরের দ্বিতীয় (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রান্তিকের চেয়ে তৃতীয় প্রান্তিক শেষ ডিএসই-৩০ শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। অপরদিকে আগের অর্থবছরের তুলনায় সমাপ্ত অর্থবছরে তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) ডিএসইর সূচক দুটি মন্দা অবস্থা পার করেছে বলে দেখা গেছে। আলোচ্য সময়ে ডিএসইএক্স এবং ডিএসই-৩০ উভয় সূচকই ৮ দশমিক ২ শতাংশ এবং ১০ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। এদিকে খাতভিত্তিক সূচকে দেখা গেছে, তৃতীয় প্রান্তিক শেষে খাদ্য এবং আনুষঙ্গিক খাতের সূচক সর্বোচ্চ ২৫৩৪ দশমিক ৮ পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছেছে। যেখানে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের সূচক ৬৮ দশমিক ১ পয়েন্ট অর্থাৎ সর্বনি¤œ অবস্থানে ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আগের তিন মাসের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে একটি মিশ্র অবস্থা দেখিয়েছে। যেখানে মূল্য সূচক প্রায় অপরিবর্তিত ছিল, বাজার মূলধন এ প্রান্তিকে বেড়েছে, পিই রেশিওর সামান্য উন্নতি হয়েছে এবং লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। জাতীয় প্রতিকূলতা এবং বৈশ্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে ইক্যুইটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। যে কারণে পুঁজিবাজারের কর্মক্ষমতা আংশিকভাবে মন্দা ছিল। ফলে ডিএসইর সূচকে তৃতীয় প্রান্তিকে বেশ উঠানামা লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ৪৪৭১ দশমিক ৭ বিলিয়ন টাকা থেকে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৪৪৮৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন টাকা হয়েছে। এর মধ্যে ওষুধ ও রসায়ন খাত সামগ্রিক বাজার মূলধনের বড় অংশ অর্থাৎ ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ ধরে রেখেছে। সেই তুলনায় পাট খাত তৃতীয় প্রান্তিক শেষে সবচেয়ে ছোট অংশ অর্থাৎ শূন্য দশমিক ০৭ শতাংশ ধরে রেখেছে। এছাড়া বাজার মূলধন জিডিপির শতাংশ হিসাবে দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ থেকে কমে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে।

অপরদিকে ডিএসইর সামগ্রিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দ্বিতীয় প্রান্তিকের চেয়ে তৃতীয় প্রান্তিকে কিছুটা বেড়েছে। এ সময় গড় পিই রেশিও সামান্য বেড়ে ১৪ দশমিক ১১ থেকে ১৪ দশমিক ২৪ পয়েন্ট হয়েছে। খাতভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতের পিই রয়েছে সর্বনি¤œ ৭ দশমিক ৮০ পয়েন্টে। এর বিপরীতে ট্যানারি খাতের পিই সর্বোচ্চ ৩৫ দশমিক ২০ পয়েন্টে এবং এর কাছাকাছি রয়েছে আইটি খাতের পিই ৩৫ দশমিক ১০ পয়েন্টে। ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত দেখা যায়, দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার নির্বাচিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পিই অনুপাতের দিক থেকে একটি মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে তৃতীয় প্রান্তিকে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বাজার থেকে তারল্য সংগ্রহের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধির অবস্থার অবনতি হয়েছে। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে তৃতীয় প্রান্তিকে ইস্যুকৃত ইক্যুইটি এবং বন্ডের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৯৫১ দশমিক ৯ বিলিয়ন টাকা হয়েছে এবং একটি নতুন কোম্পানি যোগ হয়ে পুঁজিবাজারে মোট তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৪০৯টি হয়েছে। তৃতীয় প্রান্তিকে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ২৯৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন টাকা, যেখানে দ্বিতীয় প্রান্তিকে লেনদেন ছিল ৪৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন টাকা। খাতভিত্তিক লেনদেনে দেখা যায়, আইটি খাতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে, যা ১৭ শতাংশ। লেনদেনের বেগ অনুপাত (টিভিআর) এর মাধ্যমে দেখা গেছে, বাজারে তারল্যের পরিমাণ দ্বিতীয় প্রান্তিকের ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে তৃতীয় প্রান্তিকে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।