মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজার থেকে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) ৩৯ শতাংশ শেয়ার কিনেছে এস আলম গ্রুপ। মাত্র দুটি ঠিকানা ব্যবহার করে এ গ্রুপের ১৯টি প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে এসআইবিএলের ২৮ কোটি ৮০ লাখ শেয়ার কিনে নিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, পুঁজিবাজারে একের পর এক বড় ধরনের কারসাজি হচ্ছে। এ কারসাজির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারী। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। তবে এসব নিয়ে নির্বিকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আইন অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পাঁচ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে হলে বিএসইসির অনুমতি নিতে হয়। সে কারণে ভিন্ন কৌশলে কাজটি করে এস আলম গ্রæপ। ১৯টি প্রতিষ্ঠানের নামে তারা দুই শতাংশের বেশি করে শেয়ার কেনে। গতকালের দর হিসাবে এ শেয়ারের বাজারমূল্য প্রায় ৯২৪ কোটি টাকা। এসআইবিএল সূত্রে জানা গেছে, এখন প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আসতে মরিয়া এস আলম গ্রæপ। এর আগে ইউনাইটেড গ্রæপও ব্যাংকটির মালিকানা নিতে চায়। কিন্তু নিজেদের চাওয়া পূরণ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গেøাবাল ট্রেডিং করপোরেশন এস আলম গ্রæপের একটি প্রতিষ্ঠান, যার ঠিকানা ২৫ দিলকুশা, আল-আমিন সেন্টার ঢাকা। একই ঠিকানায় রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের লায়ন সিকিউরিটিজ, মডার্ন প্রপাটিজ, পোর্টম্যান সিমেন্ট, প্রাসাদ প্যারাডাইস, ইউনিক ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, হাসান আবসান লিমিটেড, প্লাটিনাম ইনডিভোরস লিমিটেড, ডায়নামিক ভেঞ্চার লিমিডেট, রিলায়েবল এন্টারপ্রাইজ, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, লিডার বিজনেজ এন্টারপ্রাইজ, পুষ্টি ভেজিটেবল, ইউনিটেক্স স্টিল ও ইউনিটেক্স সিমেন্ট নামে আরও ১৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া একই গ্রæপের সি অ্যান্ড এ অ্যাকসেসরিস লিমিটেডের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে ১৫৫৮/১৬২১ রামজয় মহাজন লেন, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। একই ঠিকানায় রয়েছে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান, এগুলো হচ্ছে সি অ্যান্ড এ ফেব্রিকস, মেরিন এমপায়ার ও শাহ আমানত প্রাকৃতিক গ্যাস। গতকাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এসআইবিএলের ৩৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, বিষয়টি আইনসিদ্ধ হলেও একই ঠিকানা থেকে যখন উল্লেখযোগ্য হারে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়, তখন বিএসইসির উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা। কারণ অস্বাভাবিক লেনদেন হলে কোনো কারণ ছাড়াই শেয়ারের দর বাড়তে থাকে। ফলে এ শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হন বিনিয়োগকারীরা। তাই বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় বিএসইসির এদিকে নজর রাখা দরকার। তাদের মতে, কেউ আইনের মধ্যে থেকে কৌশলে শেয়ার কিনলে সেটাও বুঝতে পারার কথা বিএসইসি। কিন্তু আইনের দোহাই দিয়ে তারা যদি নীরব থাকে, সেটা অমানবিক। কারণ পুঁজিবাজারের সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের রুজি-রুটি জড়িয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীরা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব রেগুলেটরদের। কারণ পুঁজিবাজারে সবার আগে বিনিয়োগকারীর কথা ভাবা দরকার। এসআইবিএল ইস্যুতে বিএসইসির ভ‚মিকা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, কেউ যদি কোনো সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে, তবে অবশ্যই তার শাস্তি হবে। তবে এটা প্রমাণ সাপেক্ষ। এস আলম গ্রুপ শেয়ার কেনার অনুমতি নিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
Add Comment