Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:42 pm

৯৭ কোটি টাকার দুই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৩১৮ কোটিতে

ইসমাইল আলী: বর্তমানে সারাদেশে ৮০ শতাংশ লেভেল ক্রসিংই রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়। অনেক স্থানেই গেটকিপার নেই। আবার কোথায় নেই লেভেল ক্রসিং গেট। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের। তাই ৬৫৪টি লেভেল ক্রসিংয়ের মানোন্নয়নে ২০১৫ সালে দুটি প্রকল্প নেয়া হয়। তবে সাত বছর পেরোলেও প্রকল্পগুলো শেষ হয়নি। উল্টো দফায় দফায় বাড়ছে প্রকল্প ব্যয়।

তথ্যমতে, বর্তমানে সারাদেশে লেভেল ক্রসিং রয়েছে দুই হাজার ৮৫৬টি। এর মধ্যে রেলওয়ে দেখাশোনা করে এক হাজার ৪৫টি। এগুলোর মধ্যে আবার ৩৬২টিতে কোনো গেটকিপার নেই। এর বাইরেও লেভেল ক্রসিং আছে, যার সঠিক হিসাব নেই। সার্বিক বিবেচনায় ৮০ শতাংশ লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত। তাই রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিংগুলোর পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন শীর্ষক দুইটি প্রকল্প নেয়া হয়।

দুই বছরের মধ্যে প্রকল্প দুইটি শেষ করার কথা থাকলেও কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে তা চলতি বছর জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে আরও তিন বছর প্রকল্প দুইটির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ১০ বছরে গিয়ে ঠেকবে প্রকল্প দুইটির মেয়াদ। পাশাপাশি দুই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ২২১ কোটি টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য পূর্বাঞ্চলের প্রকল্পটি চতুর্থ দফা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর পশ্চিমাঞ্চলের প্রকল্পটি দ্বিতীয় দফা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্রমতে, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে পূর্বাঞ্চলে ৩২৮টি লেভেল ক্রসিংয়ের মানোন্নয়ন ও এক হাজার ৩৮ গেটকিপার নিয়োগের কথা ছিল। এজন্য ২০১৫ সালের ২৫ জুন অনুমোদিত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। পরে তা বিশেষ সংশোধনের নামে বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ কোটি ৪৪ লাখ টাকায়। প্রথম সংশোধনে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ কোটি ৫৯ লাখ ও দ্বিতীয় সংশোধনে ১০৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

সম্প্রতি প্রকল্পটি তৃতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় নিয়োজিত গেটকিপাররা বিভিন্ন লেভেল ক্রসিংয়ে কাজ করছেন। প্রকল্পের অবকাঠামোসহ অন্যান্য উন্নয়ন ২০১৯ সালের জুনেই শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত গেটকিপারদের দুই বছরের বেতন-ভাতার সংস্থান ছিল। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও গেটকিপারদের কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থায়ী করার সুযোগ নেই। তাই জনবলের পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এজন্য প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। পরে তা অর্থ বিভাগে যাবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে গেটকিপারদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে অন্ততপক্ষে দুই বছর লাগবে। ওই সময় তাদের বেতন-ভাতা চালিয়ে নিতে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩২৬টি ক্রসিংয়ের মানোন্নয়ন ছাড়াও ৮৫১ অস্থায়ী গেটকিপার নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। এজন্য ২০১৫ সালের ২৫ জুন অনুমোদিত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। পরে তা প্রথম সংশোধনের সময় বেড়ে দাঁড়ায় ৯২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সম্প্রতি প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির কারণও একই উল্লেখ করা হয়েছে।

দুই প্রকল্প মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাব অনুমোদন হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩১৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ২২০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বা ২২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। প্রকল্প দুইটির ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ে আজ বৈঠকে অনুষ্ঠিত হবে। এর পর তা পাঠানো হবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই শেষে প্রস্তাব দুইটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার বলেন, প্রকল্পের আওতায় নিয়োগকৃত গেটকিপারদের বিভাগীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পদায়ন করা হয়েছে। আর রেল দুর্ঘটনা প্রতিরোধসহ ট্র্যাক সুরক্ষা ও ট্রেন পরিচালনায় সহায়ক ভূমিকার কারণে গেটকিপার অপরিহার্য। তাই প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের আগ পর্যন্ত তাদের দ্বারা কাজ চালিয়ে নেয়া প্রয়োজন। আর অধিকাংশ নিয়োগকৃত গেটকিপারের চাকরির বয়স তিন বছর পেরিয়ে গেছে। তাই তারা অস্থায়ীভাবে কাজ করলেও গেটকিপারের দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, গেটকিপারদের চাকরির ধারাবাহিকতা বজায় না থাকলে ট্রেন পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হবে। আবার পুনর্বাসন/মান উন্নয়নকৃত গেটগুলোর জন্য নতুন পদ সৃষ্টিসহ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা প্রয়োজন হবে। তবে এতে চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে না। তাই দুই প্রকল্পের আওতায় গেটকিপারদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তবে এটি বেশ সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। তাই প্রকল্প দুটি আগামী জুনে শেষ করা হচ্ছে না। এজন্য প্রকল্প দুইটির মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মূলত এ কারণেই বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।