৯ জনেই থমকে গেল ডিসিসিআই’র দুই হাজার উদ্যোক্তা তৈরির প্রকল্প

শওকত আলী : চার বছর আগে দেশব্যাপী দুই হাজার উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। এজন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন তিন হাজার আগ্রহী উদ্যোক্তা। তবে সব শর্ত পূরণ করায় যাচাই-বাছাই শেষে ৯ জনকে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর মুখ থুবড়ে পড়ে প্রকল্পটি। ফলে নতুন আর কোনো উদ্যোক্তা উঠে আসেননি এ প্রকল্প থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকা চেম্বার সূত্রে জানা গেছে, দুই হাজার উদ্যোক্তা তৈরিতে ২০১৩ সালের ১৩ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে ডিসিসিআই। এ চুক্তির লক্ষ্য ছিল সারা দেশের ৪০ হাজার উদ্যোক্তার মধ্য থেকে সর্বোত্তম, সম্ভাবনাময়ী ও বাস্তবায়নযোগ্য দুই হাজার প্রকল্প খুঁজে বের করা। এর আওতায় সে বছরই তিন হাজার ২৯ তালিকাভুক্ত উদ্যোক্তার মধ্যে ৯টি সঠিক থাকায় ঋণ প্রদানের জন্য তা ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল। যারা যথাসময়ে ব্যাংক ঋণ পেয়েছেন। পরে আর কেউ এ বিষয়ে আগ্রহ দেখাননি। বর্তমানে প্রকল্পটির কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ৯টিতেই থেমে রয়েছে দুই হাজার উদ্যোক্তা তৈরি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এমওইউ’র শর্তানুযায়ী ৬৪ জেলার চেম্বার অব কমার্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডিসিসিআই প্রকল্প এবং উদ্যোক্তা খুঁজে বের করবে। কিন্তু জেলা পর্যায়ে কোনো ধরনের প্রচার চালানো হয়নি এবং সহযোগিতাও গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে সেরা প্রকল্প এবং এর উদ্যোক্তাদের পুরস্কৃত করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা করেনি ডিসিসিআই। নিজস্ব ট্রেনিং সেন্টার, আন্তর্জাতিক দক্ষ প্রশিক্ষক, উদ্বুদ্ধকারী, অভিজ্ঞ পরামর্শদাতা এবং পেশাজীবী দ্বারা প্রাতিষ্ঠানিক ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার শর্ত ছিল।  ডিসিসিআই নিজস্ব প্রশিক্ষক ও ট্রেনিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষিত করা। কিন্তু ডিসিসিআই’র নিজস্ব কোনো ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নেই। নেই কোনো প্রশিক্ষক। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে ৮৬২ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যা নিয়মবহির্ভূত। এজন্য তাদের ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। ফলে তারা উঠে আসতে পারেননি। এজন্য অবশ্য ডিসিসিআইকে তিরস্কারও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ডিসিসিআইকে যে নীতি মেনে উদ্যোক্তা নিয়ে আসার কথা ছিল, তা তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের কাছে যাদের নিয়ে এসেছে, তাদের কোনোমতে ধরে আনা হয়েছে। যথার্থ কোনো ট্রেনিংও দেওয়া হয়নি। এজন্য এদের অর্থায়নের কোনো ব্যবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক করেনি। ডিসিসিআইকে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে তারা যেন এ ধরনের উদ্যোক্তা না নিয়ে আসে। সব শর্ত পূরণ করেই তাদের আসতে হবে।’

২০১৩ সালের নভেম্বরে ‘উদ্যোক্তা ও আবিষ্কার প্রদর্শনীর’ মাধ্যমে দুই হাজার উদ্যোক্তা তৈরির প্রকল্প শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এরপর উদ্যোক্তা তৈরির প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সঙ্গে আলাদা আলাদা চুক্তি করা হয়েছিল।

প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ডিসিসিআই’র তৎকালীন সভাপতি সবুর খানের হাত ধরে। সে সময় বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ও বিরাট জনশক্তির চাহিদা পূরণে নতুন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে তরুণদের মধ্য থেকে দুই হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরির এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

জানা গেছে, উদ্যোক্তা তৈরির এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালে শহরে ৫০০, গ্রাম পর্যায়ে এক হাজার এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্য থেকে ৫০০টি নতুন প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল ডিসিসিআই। ডিসিসিআই’র লক্ষ্য ছিল, এসব প্রকল্পের সঙ্গে দেশের জনসংখ্যার বিরাট অংশ যুক্ত হয়ে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময় ২০১৫ সাল পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও যেতে পারেনি ডিসিসিআই।

তবে ঋণ সহায়তা পাওয়া উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় উন্নতি হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করছে ডিসিসিআই। এ জন্য সংগঠনটি পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রকল্পটির ঢাকা চেম্বারের বর্তমান পরামর্শকের দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক ব্যাংকার কাজী সাইফুর রহমান। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘তিন হাজার ২৯টি আবেদনের মধ্যে থেকে ৮৬২ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্য থেকে মাত্র ৯ জনকে ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়। যদিও ডিসিসিআই’র নিজস্ব কোনো প্রশিক্ষক নেই, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থাৎ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এসসিআইটিআই) থেকে ৮৬২ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে থেকে ২০১৬ সালে আরও ২২টি প্রজেক্টকে লোন  সহায়তার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।’

ঝিমিয়েপড়া এ প্রকল্প সচল করতে ডিসিসিআই’র উদ্যোগ সম্পর্কে সাইফুর রহমান বলেন, ‘নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়া এ বছর বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের সঙ্গে সাতটি বিভাগের সাত বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার করার কথা রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের আইডিয়া শেয়ার করা ও তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০