৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ গেছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়লেও বড় অংশই বসে থাকছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে প্রচুর আয় করেছে বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো। সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ খাতের সংকটে নতুন করে আলোচনায় আসে ক্যাপাসিটি চার্জ। তাই গত এক যুগে এ খাতে সরকারের ব্যয় ও কোম্পানিগুলোর আয় নিয়ে অনুসন্ধান করেছে শেয়ার বিজ। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের আজ ছাপা হচ্ছে শেষ পর্ব

ইসমাইল আলী: সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি বিদ্যুৎ আমদানিও করছে বাংলাদেশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছর প্রথম ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করা হয়। এর পর তা ক্রমেই বেড়েছে। যদিও তিন বছর ধরে এর পরিমাণ অপরিবর্তিত আছে। তবে আমদানিকৃত বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি ব্যয়ের পাশাপাশি ক্যাপাসিটি চার্জও দিতে হয় বাংলাদেশকে। গত ৯ বছরে এ চার্জ দিতে হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, ২০১৩-১৪ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ৯ বছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ মোট বিদ্যুৎ আমদানি করেছে চার হাজার ৮১৬ কোটি ৮০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এজন্য মোট ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৪৭৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ১১ হাজার ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থাৎ আমদানি ব্যয়ের ৪০ শতাংশ অর্থ গেছে ক্যাপাসিটি চার্জে।

সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছর ভারত থেকে প্রথম ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয়। সে বছর মোট বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ ছিল ২২৬ কোটি ৫০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় এক হাজার ১৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৫০০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩৭ কোটি ৯৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় এক হাজার ৯০০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৯২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

২০১৫-১৬ অর্থবছর আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে চুক্তি হয়। সে বছর বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮২ কোটি ২৪ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় এক হাজার ৯৬৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৮৪০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। পরের অর্থবছর আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি বাড়ানো হয়। এতে আমদানি সক্ষমতার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০০ মেগাওয়াট। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয় ৪৬৯ কোটি ৪০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এজন্য ব্যয় হয় দুই হাজার ৫৯২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৬৮ কোটি ৯ লাখ টাকা।

এদিকে ৪০ মেগাওয়াটের চুক্তি শেষ হওয়ায় পরের অর্থবছর আমদানি সক্ষমতা কমে দাঁড়ায় ৬৬০ মেগাওয়াট। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৮ কোটি ৭৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এজন্য ব্যয় হয় দুই হাজার ৮১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৭৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছর ভারত থেকে আরও ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে চুক্তি হয়। এতে আমদানি সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৪১০ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ ছিল ৬৭৮ কোটি ৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এজন্য ব্যয় হয় তিন হাজার ৭০২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৫৫৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছর ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এতে আমদানি সক্ষমতা কমে দাঁড়ায় এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৫৯ কোটি ৩২ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর আমদানি ব্যয় ছিল চার হাজার সাত কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরও আমদানি সক্ষমতা এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াটই ছিল। সে অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ অনেকটা বেড়ে দাঁড়ায় ৮১২ কোটি ৮৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৭১২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৮০৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছর ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও তা নবায়ন করা হয়। এতে আমদানি সক্ষমতা একই আছে। তবে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৭৭১ কোটি ৫৮ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে আমদানি ব্যয় কমে দাঁড়ায় চার হাজার ৬৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৭২৪ কোটি ২১ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে শুধু ত্রিপুরার ১৬০ মেগাওয়াটে পিডিবির লোকসান হতো। তবে চুক্তি নবায়নের সময় ক্যাপাসিটি চার্জ কমানো হয়েছে। বাকি এক হাজার মেগাওয়াট আমদানিতে ব্যয় দেশে ফার্নেস অয়েলে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় অনেক কম পড়ে। তাই ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি অব্যাহত রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এনভিভিএন (এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভ্যাপার নিগম লিমিটেড) থেকে দুই ফেজে যথাক্রমে ২৫০ ও ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনে বাংলাদেশ। এছাড়া সেম্বকর্প ইন্ডিয়া থেকে ২৫০ মেগাওয়াট, পিটিসি থেকে ২০০ মেগাওয়াট ও ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়।

২০১৪ সালে জিটুজি ভিত্তিতে এনভিভিএনের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয়। এ চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর। অর্থাৎ ২০৩৯ সালে এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। আর এনভিভিএনের বাকি ৩০০ মেগওয়াট, পিটিসির ২০০ ও সেম্বকর্পের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয় ২০১৮ সালে। এ তিন চুক্তি মেয়াদ ১৫ বছর। অর্থাৎ ২০৩৩ সালে এ তিন চুক্তি শেষ হবে। আর ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ চুক্তি শেষ হয় গত বছর। তবে চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হয়, যা ২০২৬ সালে শেষ হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০