Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:19 pm

৯ বছর আগের অবস্থানে রিজার্ভ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও কমেছে। মার্চ-এপ্রিল সময়ের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন বা ১৬৩ কোটি ডলার পরিশোধের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে রিজার্ভ কমে ২৩ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ৯ বছর আগের অবস্থানের মতো। ৯ বছর আগে ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (জিআইআর) দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে। সংস্থাটির নিট হিসাব অনুযায়ী, রিজার্ভ আরও কম রয়েছে। এর পরিমাণ ১৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারের মতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে রিজার্ভ সাড়ে ২৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ওই বছরের শেষে গিয়ে রিজার্ভ বেড়ে স্থিতি দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে। পরের বছর ২০১৬ সালে আরও সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ওই বছর শেষে রিজার্ভের স্থিতি দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে বেড়ে স্থিতি হয় ৩৩ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। তবে ২০১৮ সালে ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার কমে রিজার্ভ স্থিতি ৩২ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। ২০১৯ সালে হাফ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বেড়ে স্থিতি হয় ৩২ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।

 ২০২০ সালে প্রায় সাড়ে ১০ বিলিয়ন বেড়ে ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায় রিজার্ভ। আর ২০২১ সালের আগস্ট শেষে দেশে প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের রেকর্ড হয়। তবে ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন শুরু হয়। তা এখনও অব্যাহত। ২০২১ সাল শেষে রিজার্ভ স্থিতি ছিল ৪৬ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে স্থিতি আরও কমে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমে রিজার্ভ স্থিতি ছিল ২৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া চলতি বছরের ৪ মাস ১৩ দিনে রিজার্ভ ৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন কমে গতকাল সোমবার শেষে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রির কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেও রিজার্ভের পতন থামানো যাচ্ছে না। কারণ দেশে এখনও যে পরিমাণ ডলার আসছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ আমদানি ও ঋণ পরিশোধে যাচ্ছে। ফলে রিজার্ভের পতন থামছে না। এমন চলতে থাকলে রিজার্ভ ফুরাতে বেশি দিন সময় লাগবে না।

এদিকে বিপিএম-৬ অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন শেষে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। গত ৮ মে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারে। গত সপ্তাহের শেষে দিন আকু বিল পরিশোধের পর গতকাল রিজার্ভ আরও কমে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে।

সূত্র জানায়, বিপিএম-৬ অনুযায়ী নিট রিজার্ভ রয়েছে ১৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারের মতো। প্রকৃত রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। আইএমএফের দেয়া হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ থেকে আকুর দায়, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা অর্থ ও স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) হিসেবে থাকা ডলার বাদ পড়বে নিট হিসাবে। এদিকে ৪৭০ কোটি টাকা ঋণের শর্ত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রকৃত রিজার্ভ কী পরিমাণে থাকতে হবে, তা ঠিক করে দেয় আইএমএফ। তাই বাংলাদেশকে আইএমএফের শর্ত মেনে তিন মাস পরপর রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হয়। তবে ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে রিজার্ভের ত্রৈমাসিক কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ।

আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের মার্চে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। আর জুনে ২৩ দশমিক ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

আইএমএফের নথি থেকে আরও জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে রিজার্ভের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা কমিয়ে করা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। তবে সেটিও পূরণে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৮ কোটি ডলার কম ছিল রিজার্ভ।

একই ধারাবাহিকতায় গত মার্চে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে করা হয় ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। তখন রিজার্ভ ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। তবে জুনে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। এটিও পূরণ করতে পারবে না বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের কাছে রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্তে ছাড় চাওয়া হয়। তা মেনেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে ১ হাজার ৪৭৬ (১৪.৭৬৯ বিলিয়ন) কোটি ডলার। সে হিসাবে রিজার্ভ সংরক্ষণ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ৫৩৪ (৫.৩৪১ বিলিয়ন) কোটি ডলার।

প্রসঙ্গত, দেশের ইতিহাসে ২০২১ সালের আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। আর সে সময় বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ছিল ৪০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এ রেকর্ড হয় সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের আমলে। তবে সে রিজার্ভ ধরে রাখতে পারেননি ফজলে কবির নিজেই। তার আমলে কমতে শুরু করা সে রিজার্ভে ধস নামে বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেয়ার পর। তার দায়িত্ব নেয়ার মাত্র পৌনে দুই বছরের মাথায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে গ্রস রিজার্ভ।