Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:56 am

৯ মাসেই ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ২৫২০ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে আসে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। তবে সঞ্চালন লাইন না হওয়ায় ১৬ মাস পেরুলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। বন্ধ রাখতে হচ্ছে একটি ইউনিট। অথচ এ কেন্দ্রটির দুই ইউনিটের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়। এতে ক্যাপাসিটি চার্জের অর্ধেকই গচ্চা যাচ্ছে।
তথ্যমতে, পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ। ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুই ইউনিটের কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এর প্রথম ইউনিটটি উৎপাদনে আসে ২০২০ সালের ১৫ মে, আর দ্বিতীয় ইউনিটটি উৎপাদন শুরু করে একই বছর ৮ ডিসেম্বর। তবে গত মাসে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
দ্বিতীয় ইউনিট উদ্বোধনের পর থেকে কেন্দ্রটির জন্য মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছর ৯ মাসে প্রায় দুই হাজার ৫২০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে কেন্দ্রটির জন্য। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে কেন্দ্রটির জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় এক হাজার ৯৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
সূত্রমতে, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (বিসিপিসিএল), যার যৌথ মালিকানায় রয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডবিøউপিজিসিএল) এবং চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন লিমিটেড (সিএমসি)।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে মোট বাজেট ধরা হয়েছিল ২৪৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ৮০ শতাংশ তথা ১৯৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার ঋণ দিয়েছে। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ সমান হারে বিনিয়োগ করেছে এনডবিøউপিজিসিএল ও সিএমসি। যদিও বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণব্যয় পরবর্তীতে বেড়ে গেছে। এর মধ্যে কয়লা খালাসের জন্য পায়রা নদী ড্রেজিংয়ে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে এক কোটি ডলার। এছাড়া কয়লা সংরক্ষণে একটি গুদাম বেশি নির্মাণ করা হয়েছে। সেটির জন্যও ব্যয় বেড়েছে। তবে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়গুলো নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আপত্তি তুলেছে। এসব বিষয় নিয়ে গতকাল পিডিবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণব্যয়ের মধ্যে বিসিপিসিএল বেশকিছু নতুন আইটেম যুক্ত করেছে। এজন্য ভেরিয়েশন চেয়েছে কোম্পানিটি। তার মধ্যে ড্রেজিং ও কয়লা সংরক্ষণ গুদামের বিষয়টি মানা হয়েছে। তবে কয়েকটি দাবি মানা হয়নি। এর মধ্যে অন্যতম হলো কোম্পানির সম্পদ কেনা। চুক্তিতে এক্ষেত্রে শর্ত ছিল সম্পদ কেনার দিন থেকে বিনিয়োগ বিবেচনা করতে হবে। তবে কোম্পানিটি যেদিন অর্থ নিয়ে এসেছে, সেদিন থেকেই বিনিয়োগ দেখিয়েছে। এক্ষেত্রে পিডিবির আপত্তির মুখে ব্যয় কিছুটা কমবে। ফলে চ‚ড়ান্ত বিবেচনায় ক্যাপাসিটি চার্জও কিছুটা কমবে।
পিডিবির তথ্যমতে, পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতার ৮০ শতাংশ (প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর) ব্যবহার করা হবে ধরে নিয়ে লাইসেন্স দেয়া হয়। এ সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হলে বছরে প্রায় ৭০০ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। তবে গত অর্থবছর থেকে এ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ৩৮১ কোটি ১৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ সক্ষমতার ৪৫ শতাংশ ব্যবহার হয়।
কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে তিন হাজার ৩৭৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম পড়ে আট টাকা ৮৬ পয়সা। তবে সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হলে এ ব্যয় ছয় টাকার নিচে নেমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, পায়রা কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটির জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ না হওয়ায় কেন্দ্রটি থেকে পুরো বিদ্যুৎ কেনা ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জ গচ্চা দিচ্ছে পিডিবি। যদিও চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে চাহিদা অনুপাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে না পেরে লোডশেডিংও দিতে হচ্ছে নিয়মিত।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শেয়ার বিজকে বলেন, পিজিসিবির ব্যর্থতার কারণেই সময়মতো পায়রার পুরো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসছে না। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা সফল হয়নি। এজন্য তাদের জরিমানা করা হয়েছে।