নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত দেয়া হয়েছে। এতে এলসির হার কমলেও আমদানি দায় পরিশোধ কমেনি। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এক হাজার ৪৬১ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রপ্তানি আয়ে কমার সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহেও কমে গেছে। পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ সহায়তার ছাড়ও তুলনামূলক কম। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। একই সময় সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনেরও বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৫ হাজার ৩৯৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এ সময় রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ৯৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য। এতে করে এক হাজার ৪৬১ কোটি ৩০ লাখ (১৪ দশ?মিক ৬১ বি?লিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৮ টাকা ধরে) এর পরিমাণ এক লাখ ৫৭ হাজার ৮২০ কোটি টাকা।
মার্চ মাস শেষে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬৫০ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবার পেছনে দেশের ব্যয় হয়েছে ৯৪০ কোটি ডলার। সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৭৯ কোটি ডলার।
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স এখন ঋণাত্মক হয়েছে।
সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬৪ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল এক হাজার ৪৩৪ কোটি ডলার।
সামগ্রিক লেনদেনেও (ওভারঅল ব্যালান্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত সামগ্রিক লেনেদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮১৬ কোটি ডলার। এই সূচকটি আগের বছর একই সময় ঘট?তি ছিল ৩০৯ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এক হাজার ৬০৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন এক হাজার ৫২৯ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-?মার্চ সময়ে বাংলাদেশ যেখানে ৩৫৩ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩৭৮ কোটি ডলারে উঠেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে; সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়।
আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে ১৩৪ কোটি ১০ লাখ ডলার হয়েছে। গত অর্থবছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৬৩ কোটি ডলার।
একই সঙ্গে আলোচিত সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত আছে। অর্থবছরে প্রথম ৯ মা?সে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল; তার চেয়ে ৪ কোটি ১ লাখ ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) ১১ কোটি ডলার।