নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) ৯ মাসে (জুলাই ’২১-মার্চ ’২২) কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে ২১ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। এটি এ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭৬ শতাংশ। অর্থবছরের এখনও তিন মাস অবশিষ্ট রয়েছে। ব্যাংকাররা আশা করছেন এবার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, আলোচিত সময়ে ঋণ আদায় হয়েছে ১৯ হাজার ৯৭৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে কৃষকদের কাছে পাওনা রয়েছে ৪৮ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) কৃষি ও পল্লি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিতরণ করার কথা ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক মিলিয়ে বিতরণ করবে ১৭ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। আর বিতরণ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৭ শতাংশ। ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ব্যক্তি এ পরিমাণ ঋণ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২২ লাখ ৪৫ হাজার ৫২২ জনই হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। তারা নিয়েছিলেন ১৭ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিতরণকৃত ঋণের অধিকাংশই নিয়েছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।
গত দুই অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কয়েকটি ব্যাংক ব্যর্থ হওয়ায় জাতীয়ভাবে নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রার পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এজন্য অবশ্য করোনা মহামারিকে দায়ী করে আসছেন ব্যাংকাররা।
এবারের ঋণ বিতরণে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বাস্তবায়নের হার দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে পুরোটাই অর্জিত হবে। কৃষিঋণের অর্থ দুভাবে বিতরণ হয়ে থাকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। গতবারের বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা বিবেচনায় নিয়ে এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণে তিন খাতকে প্রধান বা কোর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ। ঋণ বিতরণে এ তিনটি খাতের মধ্যে পৃথক পৃথক অনুপাত নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মোট ঋণের ন্যূনতম ৬০ শতাংশ শস্য খাতে, ১০ শতাংশ মৎস্য খাতে ও ১০ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে বিতরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবশিষ্ট ঋণ বিবিধ খাতে বিতরণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো।
ঋণ বিতরণের স্বার্থে ব্যাংকগুলো নিজে সরাসরি বা কোনো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করতে পারবে। প্রতি অর্থবছরের জন্য ব্যাংকগুলোর শাখা, আমানত, মূলধন অনুযায়ী কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে না পারলে যে পরিমাণ অর্থের ঋণ বিতরণ হয়নি, সে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক জমা নিয়ে নেয়। জমা নেয়া অর্থের বিপরীতে কোনো ধরনের সুদ সুবিধা দেয়া হয় না ব্যাংকগুলোকে। পরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জমা নেয়া অর্থ ফেরত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতে উদ্ধারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। অন্যান্য কয়েকটি খাতের মতো কৃষিঋণে সুদেও ভর্তুকি দেয় সরকার। বিদ্যমান ৯ শতাংশ সুদের পরিবর্তে মাত্র চার শতাংশ সুদে কৃষিঋণ নিতে পারেন কৃষকরা। প্রথম দফার পর দ্বিতীয় দফায়ও গত সেপ্টেম্বরে নতুন করে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল ঘোষণা করা হয়। এ তহবিল হতে শস্য ও ফসল চাষাবাদে কোনো ধরনের জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন কৃষকরা।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে দেশের ব্যাংক খাতে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়। চলতি অর্থবছর থেকে শুধু কৃষিঋণের বিপরীতে সুদহার নির্ধারণ করা হয় আট শতাংশ।
ব্যাংকগুলোকে আগ্রহী করতে কৃষিঋণ বিতরণের বিষয়টি ব্যাংকের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ‘ক্যামেলস’ রেটিংয়ে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে কৃষিঋণ বিতরণের সফলতা বা ব্যর্থতার ছাপ উঠে আসে ব্যাংকের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে। আবার কৃষিঋণ আবেদনের বিপরীতে মঞ্জুর না হলে তার স্পষ্ট কারণ উল্লেখ করতে হয় ফাইলে। এটি সংরক্ষণ করেও রাখতে হয়।